ভিডিও মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:০৮ বিকাল

ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের নিরাপত্তা কোথায়

কংক্রিটে মোড়ানো এই ঢাকা শহরে দিনদিন বাড়ছে ভূমিকম্পের ঝুঁকি, আর কমছে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা। শহরটি এখন যেন এক বিশাল ইট-কংক্রিটের গোলকধাঁধা যেখানে হাজার হাজার মানুষ বাস করে, কিন্তু কোথাও নেই নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো খোলা জায়গা। নগরায়নের দ্রুত বিস্তার, পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন, দখলবাজি ও বেপরোয়া নির্মাণকাজ মিলিয়ে ঢাকা আজ একটি “উচ্চ ঝুঁকির ভূমিকম্প নগরী” হিসেবে পরিচিত। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে মানুষ কোথায় ছুটবে, কোথায় দাঁড়াবে, কোথায় পরিবারকে নিয়ে আশ্রয় নেবে এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তরই নেই। রাস্তাগুলো এমনিতেই যানজটে নাকাল; দুই পাশে সারি সারি ভবন, গাড়ি পার্কিং, দোকান  মানুষ দৌড়ানোর মতো জায়গা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর জায়গাও থাকে না। এমন বাস্তবতায় ভূমিকম্প ঘটলে প্রাণহানির ঝুঁকি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা কল্পনা করাই কঠিন। 

এক সময় ঢাকায় ছিল বড় বড় মাঠ, স্কুল-কলেজের খেলার জায়গা, খোলা প্রাঙ্গণ, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশাল চত্বর যেখানে জরুরি অবস্থায় মানুষ জড়ো হতে পারত। কিন্তু এখন সেই জায়গাগুলো দখল, বাণিজ্যিক স্থাপনা বা বহুতল কমপ্লেক্সে পরিণত হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি মহানগরে জনগোষ্ঠীর অনুপাতে নির্দিষ্ট হারে খোলা জায়গা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ঢাকায় সেই অনুপাতে খোলা স্থান প্রায় নেই বললেই চলে। হাতেগোনা কয়েকটি পার্ক আছে, তাও অনেক জায়গায় খুব ছোট, চারপাশে ভবনের দেয়ালে আটকে থাকা ফুসফুসহীন এক টুকরো সবুজ। ভূমিকম্প হলে সেখানে লাখো মানুষ কীভাবে আশ্রয় নেবে? 

ভবনগুলোর মান নিয়েও রয়েছে বড় প্রশ্ন। অনেক ভবন ভূমিকম্প সহনশীল নয়, আবার কিছু ভবন অনুমোদনবিহীনভাবে তৈরি। সংকীর্ণ গলি, রাস্তায় পার্ক করা গাড়ি, দালান থেকে বেরিয়ে আসার পথ আটকে রাখা দোকান সব মিলিয়ে বড় ধরনের কম্পনে মানুষ বের হওয়ার আগেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। ভূমিকম্পের সময় প্রথম করণীয় হলো খোলা জায়গায় ছুটে যাওয়া; কিন্তু ঢাকা শহরে সেই “খোলা জায়গা” নামের অস্তিত্বই ক্রমশ বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিনের সংবাদে দেখা যায় খেলার মাঠ দখল, পার্কে বাণিজ্যিক স্থাপনা, ফুটপাত পর্যন্ত দখল। যেন বিপদের সময়ে মানুষের বাঁচার সুযোগটুকুও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। 

কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে দুর্যোগ মোকাবিলার মডেল তৈরি করে, মহড়া আয়োজন করে কিন্তু মৌলিক সমস্যাটি থেকেই যায়। ভবনের ত্রুটি ধরা, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা, রাস্তা প্রশস্ত করা, খোলা জায়গা সৃষ্টি করা এসব কাজেই পিছিয়ে আছে নগর ব্যবস্থাপনা। জনগণও সচেতন নয়। নিজের বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তা মান যাচাই করা, জরুরি সিঁড়ি খোলা রাখা, গাড়ি দিয়ে গেট আটকে না রাখা এসব বিষয়েও অবহেলা দেখা যায়। ফলে ভূমিকম্প হলে প্রথম ৩০ সেকেন্ডেই যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, তা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা শহরের নেই বললেই চলে। 

ঢাকা শহরের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করতে হলে এখনই দ্রুত ও কঠোর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। নগরের প্রতিটি অঞ্চলে জরুরি আশ্রয়স্থল চিহ্নিত করা, খেলার মাঠ ও পার্কগুলোকে মুক্ত করা, দখলমুক্ত খোলা জায়গা তৈরি করা এগুলো এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজে কঠোর প্রযুক্তিগত মান প্রয়োগ, পুরোনো ভবন সংস্কার, এবং জনগণের সচেতনতা তৈরিও জরুরি। দুর্যোগ কখন এসে কড়া নেড়ে যাবে, সে নিশ্চয়তা নেই; কিন্তু প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। পৃথিবীর অনেক উন্নত শহর বড় দুর্যোগের পর নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তুলেছে ঢাকাও চাইলে পারে। তবে তার জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত নগরায়ন এবং মানুষের বাঁচার মৌলিক অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া। 

আরও পড়ুন

লেখক

জাফরিন সুলতানা

শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন 
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের নিরাপত্তা কোথায়

শিশুদের খেলাধুলা কেনো প্রয়োজন

বাউফলে শ্রমিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

সৌদি নেতৃত্বে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান

দীর্ঘ লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার অবদান দেশের মানুষ মনে রাখবে : মাশরাফি

বেগম জিয়ার মৃত্যুতে তামিম-মুশফিক-লিটনদের শোক