ভিডিও সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৮ দুপুর

আতশবাজির ঝলক আর পরিবেশের দীর্ঘশ্বাস

প্রতিবার ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমাদের কত আয়োজন থাকে। এই বিজাতীয় আয়োজন  উদযাপনমূলক হলেও প্রকৃতি ও মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ। থার্টিফার্স্ট নাইটে শহর জুড়ে শুরু হয় আতশবাজির ঝলক, উচ্চশব্দে গান ও নাচ, বাজি, ফানুস ও পটকার ছড়াছড়ি। এইসব পটকা, বাজি ও আতশবাজি মূলত রাসায়নিক বিস্ফোরক (পটাশিয়াম নাইট্রেট), পটাশিয়াম ক্লোরেট বা পারক্লোরেট, সালফার, অ্যালমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ) দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি। এর সাথে রং হিসেবে ব্যবহার করা হয় স্ট্রন্টিয়াম (লাল), কপার( নীল), বেরিয়াম (সবুজ)। আতশবাজি পোড়ানোর ফলে (পার্টিকুলার ম্যাটার) পি এম ২.৫ থেকে পি এম ১০কণা এগুলো এত সূক্ষ্ম যে সরাসরি ফুসফুসে ঢুকে যায়। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, শ্বাসসংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি, হাঁপানি অ্যাটাক, চোখ ও গলা জ্বালা হয়। আতশবাজি ও ফানুস উড়ানোর কারণে ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ১৬ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে এবং প্রায় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। সে বছর আতশবাজির উচ্চ শব্দের কারণে মাহমুদুল হাসান নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে ১০০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালেও ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। অতি সম্প্রতি “বায়ুমন্ডল দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র” (ক্যাপস)এর গবেষণার তথ্যে বলা হয়, আতশবাজি ও ফানুস পোড়ানোর সময় বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ যথাক্রমে ২০২৩ সালে ৩৬ শতাংশ, ১০২ শতাংশ। ২০২৪ সালে প্রায় ৩৫ শতাংশ, ১৪৪ শতাংশ। বায়ু মানসূচক ৫০ এর নিচে থাকলে ভালো বায়ু বলা হয়। সেক্ষেত্রে গত আট বছর (২০১৭ থেকে ২০২৪) বিশেষ করে দুই দিন (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি) কখনোই বায়ুমান সূচকের ৫০ এর নিচে ছিল না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০০৬ এর ৭ বিধি লংঘন করে অননুমোদিতভাবে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটালে তা বিধিমালা ১৮ বিধি অনুযায়ী দন্ড অপরাধ। প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০০০ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাসের কারাদন্ড বা অনধিক  ১০০০০ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে মানুষ যথেচ্ছা কারো পরোয়া না করে পটকা, বাজি ফোটাচ্ছে। উদযাপনকারীদের এসব থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলে তারা মানুষের উপর চড়াও হয়ে ওঠে এমন ঘটনা ও ঘটে। থার্টিফার্স্ট নাইটে মানুষ দুর্ভোগে পড়ে বিশেষ করে গর্ভবতী মা, নবজাতক শিশু এবং বৃদ্ধরা। আতশবাজি, পটকা, উচ্চ শব্দে গান এবং ফানুস উড়ানোর ক্ষতিকর দিকগুলো যদি বলা হয় শ্রবণশক্তি, স্মরণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত, দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাঘোরা, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়া, মানসিক অস্থিরতা, স্ট্রোক, হার্টঅ্যাটাক ঝুঁকি বাড়াসহ মানুষের শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। এদিকে শব্দ আর ধোঁয়ার নিচে চাপা পড়ে প্রকৃতি। ফানুসের আগুন থেকে গাছপালায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে, সেখান থেকে পশু-পাখিরা, কীটপতঙ্গ মারা যায়। যা প্রকৃতির জন্য হুমকি স্বরূপ। আমরা মানবিকতার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে নতুন বছর কে বরণ করবো। নতুন বছর শুরু হোক সুস্থ বাতাস, নিরাপদ প্রাণী আর বাসযোগ্য শহরের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। আনন্দ উদযাপন পরিবেশ ধ্বংসের কারণ হতে পারে না। এখনই সময় উৎসব উদযাপনের সংজ্ঞা বদলানোর। আমার কারো কষ্ট ও প্রাণের বিনিময়ে নতুন দিনের সূচনা চাই না। যেখানে আনন্দ থাকবে, কিন্তু প্রকৃতির ক্ষতি নয় ।

লেখক

খাদিজাতুল কুবরা মীম

আরও পড়ুন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আতশবাজির ঝলক আর পরিবেশের দীর্ঘশ্বাস

মিয়ানমারে নির্বাচন : ভয় থেকে ভোট দিচ্ছেন মানুষ

ওসমান হাদির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

ফাহিম-মুস্তাফিজদের বোলিংয়ে ১০২ রানে গুটিয়ে গেল চট্টগ্রাম

পাকিস্তানি সঞ্চালকের মুখে ‘রোকেয়ার’ কথা শুনে, চমকে গেলেন ‘কাবিলা’

বৈরি আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত গাজা, সাহায্য সরবরাহে বাধা ইসরায়েলের