বিশ্রাম ও নির্বাচনকালীন প্রশিক্ষণ
অর্ধেক সেনা সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর অর্ধেক সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বলা হয়, বিশ্রাম ও নির্বাচনকালীন প্রশিক্ষণের জন্য অর্ধেক সদস্যকে আপাতত সরিয়ে নেওয়া হবে। বুধবার থেকে তা কার্যকর হবে। তাদের বিশ্রাম ও প্রশিক্ষণের পর আবার মাঠে পাঠিয়ে বাকিদের সরিয়ে নেওয়া হবে।সভায় উপস্থিত এক শীর্ষ কর্মকর্তা গণমাধ্যমে জানান, সেনাসদস্যদের বিশ্রাম ও নির্বাচনকালীন প্রশিক্ষণের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। কোর কমিটির সভায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য, নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখার কারণে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সূত্রের দাবি, সেনাসদস্যের সরিয়ে নেওয়ার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, মাঠে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা স্বাভাবিক থাকে– সরকার সেটিও দেখতে চায়।
শাহজালালে ভল্ট ভাঙা, চুরি কিনা তদন্ত চলছে
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুড়ে যাওয়া কার্গো কমপ্লেক্স থেকে সাতটি অস্ত্র চুরির অভিযোগ উঠেছে। বিমানবন্দর থানায় করা এক জিডিতে বলা হয়েছে, গত ১৮ অক্টোবর কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন লাগে। সেখানে বিভিন্ন আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি কিছু সরকারি সংস্থার সরঞ্জাম সংরক্ষিত ছিল। পরে জানা যায়, সেখানে রক্ষিত একটি ভল্ট ভেঙে সাতটি অস্ত্র চুরি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এমফোর কার্বাইন ও ব্রাজিলের টরাস পিস্তল থাকলেও সেগুলো কোন বাহিনীর– তা জানা যায়নি।
অগ্নিকাণ্ড ও চুরির ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কোর কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য চার-পাঁচটি দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দু-একটি দেশের বিশেষজ্ঞ এরই মধ্যে এসেছেন। চুরি হয়েছে কিনা, তদন্তের পর জানা যাবে। চুরি হয়ে থাকলে কার মাধ্যমে হয়েছে, কে দায়ী– তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফয়সালা আইনিভাবে
অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে ৪০টির মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তথ্য এসেছে। কারা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত– এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী বা যে কোনো বাহিনী বা যার মাধ্যমেই হত্যাকাণ্ড হোক না কেন, প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে ফয়সালা করা হবে।
নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা থাকছে কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা এখনই আছে। নির্বাচনের সময় বন্ধ হবে কেন? আমরা বন্ধ করছি নাকি?
বডি ক্যামেরা কেনার অর্থ বরাদ্দে বিলম্ব
আরও পড়ুনসভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সাংবাদিককে জানিয়েছেন- বৈঠকে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে পুলিশের জন্য প্রায় ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এসব বডি ক্যামেরা কেনার জন্য টাকা বরাদ্দে দেরি করছে অর্থ বিভাগ। অথচ জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অর্থ বরাদ্দের কাজ দ্রুত শেষ করতে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিবর্তন হতে পারে পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পোশাকের রং
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণ পুলিশ সদস্যদের দাবি ছিল, বর্তমান পোশাক পরিবর্তন করা। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চলতি বছরের শুরুতে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক বদলের সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠক সূত্র জানায়, ৯ মাস পর সেই নতুন পোশাক চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গতকাল কোর কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। তবে কোর কমিটির সদস্যরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন। পুলিশের পোশাকের রং নির্ধারণ হয়েছিল আয়রন, র্যাবের জলপাই আর আনসারের সোনালি গমের। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের আগে বইমেলা না করার ব্যাপারেও সভায় সুপারিশ আসে।
নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধারের অগ্রগতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামের রাউজানে ১১ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়ে বলেন, রাউজান, ফটিকছড়ি একটু কঠিন এলাকা। আগেও ছিল, এখনও আছে। এসব জায়গায় অপরাধ করে অপরাধীরা পাহাড়ে চলে যায়।
নেতাকর্মীকে অবৈধ সুবিধা দিলে ব্যবস্থা
নির্বাচনে পুলিশ যদি কোনো দলকে বিশেষ সুবিধা দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে– এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কারও কোনো রকম গাফিলতি থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আগে জিডি করে রাখা হতো। এবার সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। নির্বাচন হতে হবে উৎসবমুখর।
বিগত নির্বাচনে যেসব ওসি বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেকেই এখন ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় ওসি। তাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা বলেছি ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এর নির্বাচনে যারাই ছিল, তাদের অধিকাংশকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করব। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা সবাইকে তো পারব না। প্রথম যারা তিনটা নির্বাচনে জড়িত ছিল, তাদের বাদ দেব। তারপরে যারা দুটির সঙ্গে জড়িত ছিল তারা। তারপরও যদি দেখি জনবল রয়ে গেছে, তখন একটার সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে দেব। আমি তো নিয়োগ দিয়ে নতুন ওসি নিয়ে আসতে পারব না। তারপর দেখব, যে একটা নির্বাচনে জড়িত ছিল, তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তাকে তো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শিগগির পুলিশ কমিশন হয়ে যাবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে পালিয়ে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের বাইরে যারা পালিয়ে আছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া দেশকে নানাভাবে বিশৃঙ্খল করার জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে থেকেও সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য আসছে।
জাকির নায়েককে আপাতত আসার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশে আসার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে কোর কমিটির সভায় আলোচনা হয়, জাকির নায়েক বাংলাদেশে এলে প্রচুর জনসমাগম হবে। জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচুর সদস্যের প্রয়োজন হবে। তাঁর ঢাকায় আসাকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে এত সদস্য মোতায়েনের সুযোগ নেই। সবাই এখন নির্বাচনমুখী। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় নির্বাচনের পর তিনি ঢাকায় আসতে পারেন। তবে নির্বাচনের আগে নয়।
একটি প্রতিষ্ঠান জাকির নায়েককে ২৮ ও ২৯ নভেম্বর দুদিনের জন্য ঢাকায় আনতে চায়। ঢাকার বাইরেও যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তবে জাকির নায়েকের ঢাকায় আসা নিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছে।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক








