ভিডিও মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৩ দুপুর

পথশিশুদের সাংবিধানিক অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা 

শিশুদের ভাগ্যোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ থাকলেও বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা, পুষ্টি এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না করে শিশুশ্রম নির্মূল সম্ভব নয়। তদুপরি, সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, আমরা যেন শিশুদের ‘শ্রমিক’ নয়, ‘মানুষ’ হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিই। 

পথশিশু বলতে সেই সব শিশুদের বোঝানো হয়, যারা কোনো শহরের রাস্তায় বসবাস করে এবং যাদের মাথার ওপর কোনো দায়িত্বশীল অভিভাবকের ছায়া নেই । দারিদ্র্যতা, পারিবারিক ভাঙন, নির্যাতন কিংবা সামাজিক বৈষম্যের কারণে তারা গৃহহীন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয় শহরের ফুটপাত, রেলস্টেশন বা বস্তিতে অনিরাপদ জীবনযাপন করতে। এই শিশুরা সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অংশ।

যে বয়সে শিশুদের স্কুলের ব্যাগ কাঁধে করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার কথা, সেই বয়সেই পথশিশুরা জীবিকার তাগিদে ফুল বিক্রি, আবর্জনা সংগ্রহ বা নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হয়। ফলে তারা শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত থাকে। সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু তা নিশ্চিত হয়েছে? মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পথশিশুর শৈশব হারায়, অপুষ্টি ও রোগবাধি বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। বহু পথশিশু বিষন্নতা, উদ্বেগ এবং সামাজিক বর্জনের শিকার হয়। সমাজের অবহেলা তাদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে। অনিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে অনেক পথশিশু একসময় অসামাজিক কর্মকান্ডের দিকে ধাবিত হয়। এটি তাদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বের ব্যর্থতার ফল।

বাংলাদেশের সংবিধানে সরাসরি ‘পথশিশু’ শব্দটি উল্লেখ নেই। তবুও সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ তাদের অধিকার সুরক্ষিত করেছে। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো সবার জন্য বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করা যা সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে। কিন্তু যখন পথশিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্বের ব্যর্থতার প্রমাণ। সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জোরপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধ। পথশিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ বা বাধ্যতামূলক শ্রমে যুক্ত করা এই অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। তাই নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং সহিংসতা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। পথশিশুরাও নাগরিক; তাদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা যাবে না। অনুচ্ছেদ ২৮ অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জন্মস্থান বা সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ। অর্থাৎ দারিদ্র্য বা গৃহহীনতার কারণে পথশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ সংবিধানবিরোধী।

পথশিশুরা কোনো বোঝা নয়; তারা দেশেরই অংশ এবং ভবিষ্যৎ নাগরিক। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা মানবিক দায়িত্ব এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। রাষ্ট্র, সমাজ এবং আমাদের প্রত্যেকের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া পথশিশুর জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব নয়। এখনই সময় সংবিধানের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের যাতে কোনো শিশুর শৈশব রাস্তায় হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুন

লেখক

তাকবির জাহান

শিক্ষার্থী ,আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ 
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পথশিশুদের সাংবিধানিক অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা 

ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক হামলা

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহ নগরীতে আনন্দ মিছিল

প্লাস্টিকের অভিশাপ: প্রতিদিনের জীবনে বিষ 

ফিফা র‌্যাংকিং : শীর্ষে স্পেন, অপরিবর্তিত বাংলাদেশ

ইউক্রেনের ওডেসায় রুশ হামলায় ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়