ভিডিও বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৩৪ দুপুর

পরিবেশ আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

আমরা ঘরে বসে ভাবি বাংলাদেশ এক উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু আসলে কি আমরা সত্যি উন্নতির দিকে এগোচ্ছি, নাকি উন্নয়নের দৌড়ে নিজের জীবনব্যবস্থার ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনছি? বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে শিল্পায়ন, নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ এখন এক গভীর সংকটে। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বড় শহরগুলোতে বায়ু, পানি ও শব্দদূষণ বেড়েই চলছে। নদী দখল হচ্ছে, দূষণের ফলে দিন দিন আমাদের নদীমাতৃক দেশটি তার নদীগুলো হারাচ্ছে। বন উজাড় হচ্ছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব পরিবেশকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের পরিবেশ আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়ন এখন শুধুমাত্র সময়ের দাবি। 

আমাদের দেশে পরিবেশ রক্ষার জন্য আইন আছে, নীতি আছে, প্রতিষ্ঠানও আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব আমরা দেখতেই পাই শুধু কাগজে-কলমে, বাস্তবে আইনের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখি না। পরিবেশ রক্ষার জন্য ১৯৯৫ সালে তৈরি করা হয় “বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫”, যা দেশের পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মৌলিক আইন হিসেবে বিবেচিত। এই আইনের অধীনে বিভিন্ন বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যেমন: পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬। পরিবেশ আদালতও আছে। কিন্তু চারপাশে তাকালে দেখা যায়, নদী দখল, বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক বর্জ্য, ইটভাটার ধোঁয়া সবকিছু আগের মতোই চলছে। তাহলে প্রশ্ন আসে, আইন থাকার পরও কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না?

এখানে সমস্যা শুরু হয় দায়িত্বহীনতা আর প্রভাবশালী মহলের নিয়ন্ত্রণ থেকে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আজও বর্জ্য পরিশোধন ছাড়া নদীতে বর্জ্য ফেলছে, অথচ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই নানা বাধা আসে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হাতে যথেষ্ট লোকবল বা প্রযুক্তি নেই, আবার রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক সময় তারা চাইলেও কিছু করতে পারে না। বাংলাদেশের বড় শহরগুলো বিশেষ করে ঢাকা, এখন বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর। শীত এলেই কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়, মানুষ অসুস্থ হয়, কিন্তু কারণ কেউ স্বীকার করতে চায় না। ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ আসে, কিছুদিন বন্ধ থাকে, আবার চালু হয়। বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো দিন দিন দূষিত বর্জ্যের কারণে মারা যাচ্ছে, নদী দখল হচ্ছে, জলাশয় ভরাট হচ্ছে, বন কমছে সবকিছু যেন চোখের সামনে ঘটছে, কিন্তু কেউ যেন দেখেও দেখছে না।

আমরা প্রায়ই ভুলে যাই পরিবেশ মানে শুধু গাছপালা না, পরিবেশ মানে মানুষের জীবনও। গ্রামের দরিদ্র মানুষ, উপকূলের জেলে, চরের কৃষক তারা প্রত্যেকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব ভোগ করছে। ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, খরা, নোনা পানি সবকিছুর মাঝেও তাদের বেঁচে থাকার লড়াই চলছে। অথচ শহরে বসে আমরা শুধু পরিসংখ্যান দেখছি। বিচার বিভাগ মাঝে মাঝে ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে আদালত সরকারকে নদী বাঁচানোর নির্দেশ দিয়েছে, পরিবেশ রক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু যতদিন না সরকার এবং জনগণ একসঙ্গে সচেতন হবে, শুধু আদালতের নির্দেশে পরিবর্তন আসবে না। 

এখন প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপের। প্রথমত, পরিবেশ অধিদপ্তরকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দিতে হবে, তাদের জনবল ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সচেতনতামূলক সেমিনার ও কর্মসূচি চালু করতে হবে। পাশাপাশি মিডিয়াকেও আরও দায়িত্ব নিতে হবে শুধু সমস্যা দেখিয়ে নয়, সমাধান নিয়েও কথা বলতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিই, কিন্তু দেশে এসে তার বাস্তবায়ন দেখি না। কাগজে-কলমে যত শক্ত পরিকল্পনা লেখা থাকে, মাঠে তার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সবশেষে বলতে হয় আইন যতই থাকুক, যদি আমরা নিজেরা সচেতন না হই, ততদিন কিছুই বদলাবে না। প্রকৃতিকে আমাদের ভালোবাসতে হবে, তাহলেই প্রকৃতিও আমাদের ভালোবাসবে। তা না হলে ইতিহাস আমাদের মনে রাখবে প্রকৃতির প্রতি বেপরোয়া এক ধ্বংসাত্মক জাতি হিসেবে। 

আরও পড়ুন

লেখক

আব্দুল রাহিম

শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরিবেশ আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রে চলন্ত গাড়ির ওপর আছড়ে পড়ল বিমান

দুই মাসে ৭৩৮ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল

দলে না রাখায় ভারতীয় কোচকে হত্যাচেষ্টা তিন ক্রিকেটারের!

ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে আগ্রহী নয় কিয়েভ, বিকল্প প্রস্তাব পাঠাচ্ছে জেলেনস্কি

জরুরি বৈঠক ডেকেছেন আসিফ মাহমুদ, উঠেছে তার পদত্যাগের গুঞ্জন