ভিডিও মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:১৮ দুপুর

নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া: শ্রদ্ধাঞ্জলি

বাঙালীর আধুনিক যুগের ইতিহাসে যে নারীর নাম গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়, সেই নাম হচ্ছে রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন-বেগম রোকেয়া। বাঙালী সমাজ যখন ধর্মীয় প্রতিবন্ধিকতা আর সামাজিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল, সেই সময় বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালী মুসলিম জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম একজন পথিকৃৎ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক অভিযাত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। 

মাত্র ৫ বছর বয়স থেকে তাঁকে পর্দা করতে হত। মেয়েদের শিক্ষা বিষয়ে তাঁর পরিবার ছিল খুবই রক্ষণশীল। নারীর লেখাপড়া শেখানোর কোন চল তার পরিবারে ছিল না। আর বাড়ির বাইরে গিয়ে শিক্ষালাভ করা ছিল একপ্রকার নিষিদ্ধ। কিন্তু অদম্য বেগম রোকেয়ার প্রথম জীবন থেকেই ছিল শিক্ষার প্রতি প্রবল অনুরাগ। প্রবল টান। প্রবল ভালবাসা। আর শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা। এই অবস্থায় রোকেয়া কৈশরে দাদার কাছে গোপনে কিছু বাংলা ও উর্দু শেখেন। যদিও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যা অথাৎ দুই ভাই লেখাপড়া করতেন এবং অভিযাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করতেন। কিন্তু ওই পরিবারে নারী শিক্ষা ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ। বেগম রোকেয়াকে সমগ্র জীবন প্রবল সংগ্রাম করে জীবন পরিচালিত করতে হয়েছে। কিন্তু  সমাজ তাঁকে দিয়েছে স্বীকৃতি। শিশু বয়সে মায়ের সঙ্গে কলকতায় বসবাসের সময় বেগম রোকেয়া লেখাপড়ার যে সামান্য সুযোগ পেয়েছিলেন, তা সমাজ ও আত্মীয়স্বজনের সমালোচনায় বেশিদুর এগোতে পারেনি। যদিও কৈশরে তিনি আরবী, ফরাসী, ও কিছুটা বাংলা আয়ত্বে আনতে পেরেছিলেন গোপনে অনেকটা। 

তার স্বামী ছিলেন উদারমনা এক আধুনিক মানুষ। আর বেগম রোকেয়ার আসল শিক্ষাজীবন শুরু হয় বিয়ের পর থেকে। তার স্বামীর সহচর্যে উর্দু ও ইংরেজী শিক্ষা ভালভাবে আয়ত্বে আনতে পেরেছিলেন। কিন্তু মাত্র ২৮ বয়স বয়সে তিনি স্বামীকে হারান। মাত্র ১০ বছরের দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপপ্তি ঘটে তাঁর জীবনে। দেখা দেয় নানা বিপত্তি, সমস্যা।  ১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গদ্য রচনার মধ্য দিয়ে তার লেখক জীবন ও সাহিত্য জীবন শুরু হয়। ১ টি মাত্র বেঞ্চ ও ৫ জন ছাত্রী নিয়ে তিনি শুরু করেন ‘সাখওয়াত মোমোরিয়াল গার্লস স্কুল’। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেন স্কুল খুলে। কারণ সামাজিক প্রতিবন্ধিকতা। সে সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের ঘরের বাইরে গিয়ে শিক্ষালাভ ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ। তিনি নিজে পায়ে হেটে বোরকা পড়ে ঘরে ঘরে শিক্ষার্থী জোগাড় করতেন। স্কুলে মিটিংও করতেন পর্দার অন্তরাল থেকে।কিন্তু নানা কারণে তাই সেই প্রচষ্টা ব্যর্থ হল। চলে এলেন কোলকাতায়। তখন তাঁর বয়স ৩০। 

১৯১১ সালে ১৬ মার্চ কলকাতার ১৩ নং ওয়ালিউল্লাহ লেনে এবার ২টি বেঞ্চ আর ৮জন ছাত্রী নিয়ে আগের নামেই নতুন আর একটি স্কুল খুললেন। স্বজনহীন, পরিচিতিহীন এক নতুন শহরে আরেক জীবনের যুদ্ধ শুরু করলেন তিনি। তাঁরও ছিলনা কোন প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা। যে শহরে তার স্কুল, সেই শহরে আর কোন মানুষ তাঁর পরিচিত ছিলেন না। একাই লড়াই করতে নেমে গেলেন পথে। এর মাঝে প্রবল অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিল। কারণ বেতন দিয়ে কোন শিক্ষার্থী সেই সময় পড়াশুনা করবে- এটি চিন্তার বাইরে ছিল। তাই ১৯১৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ’আনজুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ নামে একটি নারী সমিতি। এখানেও তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে নানা বাধা, বিপত্তি। কিন্তু সব ধরনের বাধার মুখে তিনি ছিলেন অবিচল। তাঁর অভ্যাস ছিলেন রাতের বেলায় তিনি সাহিত্য চর্চা, জ্ঞান চর্চা করতেন। তা ছাড়া দিনের বেলার পড়াশুনা ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ। অবশেষে জীবনে পথের পথ তাঁর থেমে যায় তাঁর জন্ম তারিখে। অথাৎ তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস ছিল ৯ ডিসেম্বর। সেই আমলে বেগম রোকেয়া ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন নামকরা কবি ও নারী জাগরণের পথিকৃত। নারীদের সার্বিক উন্নতির জন্য তিনি শিক্ষা গ্রহণকেই সর্বাগে জোর দিয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল নারীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। 

রোকেয়ার সমাজচিন্তা ও সমাজে পরিবর্তনের বিশ্বাস আধুনিক মতবাদে উজ্জীবিত। নারীর কাঙ্খিত মুক্তিসাধন ও নারীশিক্ষার উদ্দীপ্ত-প্রাণ বেগম রোকেয়া তাই চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবেন তাঁর আপন কীর্তি ও সৎকর্মের জন্য। ১০০ বছর আগে বেগম রোকেয়া এমন দুনিয়ার এক স্বপ্ন দেখেছিলেন যার অনেক কিছুই আজ বাস্তব। রেকেয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন, মমতা আর মানবতাভিত্তিক এক সমাজ যেখানে কোন অপরাধ নেই, নেই কোন কলুষতা। তার জন্য যে তিল তিল শ্রমে তাঁকে এগোতে হয়েছে তা হয়তো কিছুটা গল্পের মতোই শোনাবে আজকের প্রজন্মের কাছে। তবু তিনি মহান। মহান তার কীর্তি।

আরও পড়ুন

লেখক

রবিউল ইসলাম (রবীন)

সহকারী অধ্যাপক (অবঃ), কলামিষ্ট

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া: শ্রদ্ধাঞ্জলি

বেগমগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০টি দোকান পুড়ে ছাই

বাকস্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ নাকি অন্যকিছু

নির্বাচনের ট্রেনে উঠে গেছি আমরা : সিইসি

বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিলের সামর্থ্যের পরীক্ষা নেবে নরওয়ে

ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মাইক্রোবাস–অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১