ভিডিও শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:০৬ বিকাল

বাংলার ওসমান হাদি যেন অটোমানের ওসমান গাজী

ইতিহাসের পাতায় কিছু নাম ব্যক্তি হিসাবেই নয়, বরং সাহস ও নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকে। অটোমান তথা ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমান গাজী  তেমনই এক চরিত্র। সময়, ভূগোল ও প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও সাহসিকতার দিক থেকে বাংলার বীর সন্তান ওসমান হাদির এক আশ্চর্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওসমান গাজী যখন ইতিহাসের পাতায় আবির্ভূত হন, তখন চারদিকে ছিলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার লড়াই আর অনিশ্চয়তা। সীমিত শক্তি নিয়েও তিনি দমে যাননি। ভেঙ্গে পড়া সেলজুক সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন এক নতুন শক্তির ভিত্তি।সে সময়ের ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, মঙ্গলীয় সাম্রাজ্য এবং ক্ষমতাধর রোমান ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারীরাও যেন ওসমান গাজীর সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বকে উঠতে-বসতে নীরব সালাম জানাত।

যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর দৃঢ়তা আর রাষ্ট্রগঠনে তাঁর প্রত্যয় সমকালীন শক্তিধর সাম্রাজ্যগুলোর মাঝেও এক অনন্য মর্যাদা তৈরি করেছিল। ওসমান গাজীর মতোই ওসমান হাদির ও মূল অস্ত্র সাহসিকতা আর মানসিক দৃঢ়তা। ওসমান হাদির সাহসিকতা কোনো ক্ষণিকের আবেগ নয়, বরং তা এক দীর্ঘ সাধনার ফল। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও সত্যের পক্ষে অবিচল থাকা, অন্যায়ের সামনে নত না হওয়া এবং ঝুঁকি জেনেও ন্যায়ের পথ বেছে নেওয়াই তাঁর সাহসের মূল পরিচয়। তিনি বিশ্বাস করতেন সাহস মানে শুধু শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার নৈতিক দৃঢ়তা। 

সময়ের চাপ, ভয় কিংবা একাকিত্ব কোনোটিই তাঁকে দমাতে পারেনি। যখন অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ নীরবতা বেছে নেয়, তখন ওসমান হাদি দায়িত্বের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। তাঁর সাহস ছিল যুক্তিবোধে সংযত, আবার প্রয়োজনে বজ্রকঠিন। নেতৃত্বে তিনি দেখিয়েছেন, সাহস মানে আগ্রাসন নয় সাহস মানে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। হাদির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে একটি ঘর নিঃশব্দ হয়ে গেছে। কান্নার শব্দ আছে, মানুষের ভিড় আছে, শোকের আনুষ্ঠানিকতা আছে তবু সেই ঘরটিতে বাবা নেই। সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা তাই পরিবারের, আর সেই ক্ষতের গভীরে পড়ে আছে এক অবুঝ শিশু যে এখনও বুঝে উঠতে শেখেনি, ‘বাবা’ মানে কী। আপনার ঘরে কি এক বছর বয়সী কোনো সন্তান আছে? সদ্য বাবা-চেনা চোখে নিজেকে দেখেছেন কখনো? সেই চোখে যখন প্রথমবার নিরাপত্তা জন্ম নেয়, তখনই যদি পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায় সে অন্ধকারের নামই তো এতিমত্ব। ‘’যিনি সংগ্্রামী তার মৃত্যু ঘরে বসে হতে পারে না, তার মৃত্যু হবে সংগ্্রামের মধ্যে দিয়ে রাজপথে’’ এই একটি মাত্র উচ্চারণই স্পষ্ট হয়ে ওঠে ওসমান হাদির সাহসিকতার প্রকৃত পরিচয়। ভয়কে অগ্রাহ্য করে, নিরাপদ নিরবতাকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি লড়াইকে বেছে নিয়েছেন জীবনবোধ হিসেবে।

হাদির আদর্শকে যদি হারতে দেন, তবে আপনিও গাদ্দার। আপনার আচরণের সঙ্গে ওদের কৃতকর্মের কোনো পার্থক্য না থাকলে, আপনার প্রতিও সমান ঘৃণাই জন্ম নেবে। হাদি ইনসাফের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। আর আপনি সেই মৃত্যুকে নিয়ে ব্যবসা করছেন। ধ্বংসের লেলিহান পতাকা উড্ডয়ন করছেন। এটি হাদির করা লড়াইয়ের প্রতি বে-ইনসাফ। হাদি জীবিত থাকলে আপনাকে এই অন্যায় করতে দিত না।  

আরও পড়ুন

লেখক 

ইশতিয়াক ইশা

শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইমরান এবং তার স্ত্রীকে ১৭ বছর কারাবাসের সাজা দিলেন আদালত

বাংলার ওসমান হাদি যেন অটোমানের ওসমান গাজী

শত শত কামিকাজি ড্রোন কিনছে ভারত

নকলায় নিখোঁজের চারদিন পর বাড়ির পাশের পুকুর থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭

তাসকিন মুস্তাফিজের লড়াইয়ে জয় মুস্তাফিজের