ভিডিও বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৩ দুপুর

মিয়াওকি ফরেস্ট ও বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা

জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং দ্রুত শিল্পায়নের চাপের কারণে আমাদের বনভূমি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। এই বাস্তবতার মধ্যেই আলোচনায় এসেছে মিয়াওকি ফরেস্ট, জাপানি উদ্ভিদবিদ ড. আকিরা মিয়াওকির উদ্ভাবিত একটি বনায়ন পদ্ধতি, যা স্বল্প সময়ে ঘন ও টেকসই বন গঠনে অত্যন্ত কার্যকর। এই পদ্ধতির মূলশক্তি হলো স্থানীয় প্রজাতির ব্যবহার। গবেষণায় দেখা গেছে, মিয়াওকি পদ্ধতিতে তৈরি বন প্রচলিত বনায়নের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঘন হয় এবং একক প্রজাতির বনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি কার্বন শোষণ করতে পারে। এ পদ্ধতিতে মাটিতে জৈব উপাদান যোগ করে তার গঠন ও উর্বরতা উন্নত করা হয়, এতে শিকড় দ্রুত বিস্তার লাভ করে, পানি ধারণক্ষমতা বাড়ে এবং মাটির পুষ্টি কার্যক্রম সক্রিয় থাকে। প্রথম দুই-তিন বছর নিয়মিত পরিচর্যার পর বন স্বনির্ভর হয়ে নিজের মতো বৃদ্ধি পায়। দ্রুত বৃদ্ধি এই পদ্ধতির অন্যতম বড় সুবিধা গাছের উচ্চতা ও ঘনত্ব সাধারণ বনায়নের তুলনায় বহু গুণ বেশি বাড়ে। ফলে বিভিন্ন পাখি, পতঙ্গ ও ছোট প্রাণী দ্রুত আশ্রয় খুঁজে পায়, জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হয়। বিশেষ করে আশা করা হচ্ছে শহুরে এলাকায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর হতে পারে। যেহেতু এ পদ্ধতিতে সীমিত জায়গায় অল্প সময়ে ঘন বন গড়ে তোলা যায়, যা তাপমাত্রা কমায়, বায়ুর মান উন্নত করে, কার্বন শোষণ বাড়ায় এবং বৃষ্টির পানি ধারণে সহায়তা করে, ফলে নগর পরিবেশ কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে আনার আশার পথ হতে পারে মিয়াওকি পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ খরচও তুলনামূলক কম, কারণ কয়েক বছরের পর এই বন নিজেই স্বনির্ভর হয়ে ওঠে ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশে মিয়াওকি পদ্ধতির সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর খালি জমি, রাস্তার পাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা, শিল্প এলাকার চারপাশ সবখানেই ছোট আকারে মিয়াওকি বন তৈরি করলে তা একটি শক্তিশালী উদ্যোগ হতে পারে। ইতিমধ্যে দেশে বিভিন্ন স্থানে এ পদ্ধতিতে বনায়ন হয়েছে; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে তৈরি করা মিয়াওকি বন এর সফল উদাহরণ, যা কয়েক বছরের মধ্যেই ঘন ও সমৃদ্ধ আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইসহ আরও কয়েকটি এলাকায় এর ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে।

তবে এ পদ্ধতিতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। শুরুতে রোপণের ঘনত্ব ও মাটির বিশেষ প্রস্তুতির কারণে ব্যয় কিছুটা বেশি। সঠিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা না থাকলে সফলতা কমে যেতে পারে। বিশেষ করে কোন প্রজাতি কোন মাটিতে উপযোগী, তা ভুল নির্ধারণ করলে বন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তারপরও বনভূমি হ্রাস, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিয়াওকি ফরেস্ট বাংলাদেশের জন্য হতে পারে একটি বাস্তবসম্মত ও সম্ভাবনাময় সমাধান। সঠিক প্রজাতি নির্বাচন, বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা এবং পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে এই পদ্ধতি নতুন সবুজ ভবিষ্যতের দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে শহরাঞ্চলে ছোট পরিসরে এই বনের সম্প্রসারণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এমনটাই আশা করা যায়।


লেখক

কারিশমা ইরিন

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থী

বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিয়াওকি ফরেস্ট ও বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা

চুয়াডাঙ্গায় পুকুর থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

তারেক জিয়ার অপেক্ষায় পুরো দেশ

পতাকা নামাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় নেতানিয়াহুকে কড়া বার্তা ট্রাম্পের

সমালোচনার মুখে বিশ্বকাপের টিকিটের দাম কমালো ফিফা