বাবুর্চির ১৫ মাসের, কেয়ার গিভারের ১৭ মাসের বেতন বকেয়া
বগুড়ায় প্রতিবন্ধী ১১ শিশু-কিশোরের অসহায় জীবন যাপন
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় তীব্র মাত্রার নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজএ্যাবিলিটি (এনডিডি) বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ১১ শিশু-কিশোর চিকিৎসা ও অন্যান্য যাবতীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে অসহায় জীবন যাপন করছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বগুড়া শহরতলীর বারপুরে অবস্থিত সুরক্ষা বঞ্চিত মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে তীব্র মাত্রার এনডিডি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু, কিশোর ও ব্যক্তিদের আবাসন কেন্দ্র হিসেবে চালু করা হয়।
কেন্দ্রটিতে অবস্থানরত ১১ জন তীব্র মাত্রার এনডিডি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু, কিশোর ও ব্যক্তির চিকিৎসা, সেবা, ফিজিও থেরাপি’র জনবলসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি বলতে কোন কিছুই সরবরাহ করা হয়নি। এ ছাড়াও অস্থায়ী ভিত্তিতে বাবুর্চি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের ১৫ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আবাসন কেন্দ্রটি’র ১১ প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর চিকিৎসা ও সেবা বঞ্চিত অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক সমাজসেবা অফিসার মো: সাজেদুর রহমান এসব প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের চিকিৎসা ও সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানালেন, বগুড়ার এ আবাসন কেন্দ্রে অবস্থিত প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের চিকিৎসার নিশ্চয়তা ও সেবা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে অনেক বার যোগাযোগ করেও এসব বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরতলীর বারপুরে অবস্থিত সুরক্ষাবঞ্চিত মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রেটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কেন্দ্রটিতে সুরক্ষা বঞ্চিত মেয়েদের হাতে-কলমে সেলাই প্রশিক্ষণ, ব্লকবাটি প্রশিক্ষণসহ প্রাইমারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হতো। দেশে করোনাকালীন সময়ে সর্বশেষ যারা কেন্দ্রটিতে ছিল তাদেরকে সুরক্ষাবঞ্চিত নারী সুরক্ষা কেন্দ্র কুষ্টিয়ায় প্রেরণ করে মন্ত্রণালয়।
এরপর ২০২৪ সালের জুন মাসে ওই আবাসন কেন্দ্রটি তীব্র মাত্রার প্রতিবন্ধীতা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅনার (এনডিডি) বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু, কিশোর, ব্যক্তিদের আবাসন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মন্ত্রণালয়। সেখানে চট্রগ্রামের রৌফবাদ প্রতিবন্ধী আবাসন কেন্দ্র থেকে ১০ জনকে প্রেরণ করে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও কুষ্টিয়া থেকে আদালতের আদেশে সায়েম (১১) নামের এক শিশুকে প্রেরণ করা হলে, বর্তমানে কেন্দ্রটিতে মোট ১১ জন তীব্রমাত্রার এনডিডি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু, কিশোর অবস্থান করছে।
আরও পড়ুনসূত্র জানায়, তীব্র মাত্রার প্রতিবন্ধী বিশেষ করে এনডিডি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু-কিশোর, ব্যক্তিতের পূর্ণ আবাসিক কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, ফিজিও থেরাপিস্ট, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবিকা, ফিজিও থেরাপির যাবতীয় যন্ত্রপাতি, টেকনিশিয়ান, চিকিৎসা সেবায় ওষুধ সরবরাহ, তাদের উপযুক্ত বিছানা, তাদের শারিরীক বিকাশের জন্য পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার সরবরাহ, দেখা শোনার জন্য কেয়ারগিভার, রান্নার জন্য বাবুর্চি, চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে ডিজিটাল ট্রাকশন, ফিজিও থেরাপি মেশিন, টেন্স মেশিন, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, আই এফটি থেরাপী, আই আর আর, লুমিনাস, নন লুমিনাস, এমএসটি, ডেভিট থেরাপি, লেজার থেরাপি, সিপিএম, স্ট্যাটিক সাইকেল, টেডমিল, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, হুইল বার, প্যারালাল বার, ব্যালান্স বোর্ড, থিকার থেরাপি, ওয়াকস বাথ থেরাপি, হেয়ার এইড, ফিজিও গান, স্পেশাল সেটিং চেয়ার।
এ ছাড়াও অকুপেশনাল গোস মইব, ফাইম মইব, ট্রাম্প লাইন, ওয়াকিং হর্স, কর্ণার চেয়ার, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, এবাকাস, ফুটবল, সেঞ্চুরী ব্র্যাশ ওয়াকারসহ নানা ধরণের সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। তবে চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, এবং এসব যন্ত্রপাতির কোন কিছুই এ কেন্দ্রে নেই। তাছাড়া এ কেন্দ্রের কোন যানবাহন না থাকায় প্রতিবন্ধী এসব শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য অটো ভাড়া করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। সেখাতে তদারকির জন্য আলাদা লোক নিয়োগ দিতে হয়।
এদিকে খাবার রান্না করার জন্য স্থায়ী বাবুর্চি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ধোপা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও অস্থায়ী ভিত্তিতে বাবুর্চি এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ধোপা নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের ১৫ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়াও কেয়ার গিভার ৮ জনের ১৭ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।
বগুড়ার বারপুরে সুরক্ষাবঞ্চিত মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে তীব্র মাত্রার ১১ প্রতিবন্ধী শিশু কিশোর চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: আতাউর রহমান বলেন, গত প্রায় দেড় বছরে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালকের মাধ্যমে সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে বারংবার যোগাযোগ ও চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় নি।
মন্তব্য করুন







