তিস্তার চরে রবি ফসলে ঘুরছে জীবন-জীবিকা
রুহুল ইসলাম রয়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর): খরস্র্রোতা তিস্তা নদীতে এখন পানি নেই। জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর ও ডুবোচর। শুকনো মৌসুমে জেগে ওঠা বালুচরে শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসল আবাদ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ফিরছেন স্বপ্নের খোঁজে।
বর্ষার ঢলের সাথে আসা পলিতে উর্বর হওয়া এসব চরে রবি মৌসুমে আলু, মিষ্টিকুমড়া, লাউ, সরিষা, গম, ভুট্টা, চীনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচসহ নানা ধরনের শাকসবজি আবাদ করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন রংপুরের চরের কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার তিস্তার ৬৭টি চরে অন্তত ৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। এসব চরে প্রতিবছর প্রায় সোয়া লাখ টন বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে তিন উপজেলায় তিস্তার প্রায় ৩শ’ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকায় নির্মিত ৮৫০ মিটার দীর্ঘ তিস্তা সেতুর মাত্র ৬০ মিটার অংশ দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে সবুজে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ছোট রুপাই ও গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক এলাকায় বিস্তীর্ণ চরে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ হয়েছে। কুমড়ার বেডের মাঝখানে সাথী ও মিশ্র ফসল হিসেবে পেঁয়াজ, রসুন, লালশাক ও লাউয়ের বীজ বপন করা হয়েছে।
ছোট রুপাই এলাকায় দুই বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছেন হালিমা বেগম বলেন, চরেই তাদের জীবিকার ভরসা। পরিবারের সবাই মিলে নিজেরা শ্রম দিয়ে আবাদ করছেন। একই এলাকায় তিন বিঘা জমিতে কুমড়া চাষ করা কৃষক আবুল হোসেন বলেন, গতবছর আলু আবাদে লোকসান হওয়ায় এবার কুমড়ায় ঝুঁকেছেন।
আরও পড়ুনগঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর তিস্তা সেতু এলাকাতেও রবি ফসল চাষ চলছে। কেউ কেউ বালু সরিয়ে গর্ত তৈরি করে পলিমাটি ও জৈব সার মিশিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ আবার সেচ দিয়ে ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। আবার কেউ ভুট্টা ক্ষেতে লাঙল টানছেন। তবে কৃষকরা জানান, চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় ফসল পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। মৌসুমের শেষ দিকে নদীতে পানি কমে গেলে সেচ সংকটও দেখা দেয়।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, বর্ষায় তিস্তার খরস্র্রোতে চরাঞ্চলে ফসল ও বসতভিটার ক্ষতি হয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা চর কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে উৎপাদন আরও বাড়বে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হোসেন জানান, চলতি বছর উপজেলায় মিষ্টিকুমড়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬০ হেক্টর। ইতোমধ্যে ১শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কৃষকদের বীজ, সারসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিস্তার চরের বিস্তীর্ণ এলাকা চাষের আওতায় আসায় স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চরের উৎপাদিত মিষ্টিকুমড়া দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে।
মন্তব্য করুন









