জয়পুরহাটের ২৭ কৃষি পরামর্শ কেন্দ্রের অবস্থা নড়বড়ে, চাষিদের কার্যক্রম বন্ধ
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নে স্থাপিত ভবনগুলোর অবস্থা বেহাল। ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে ২৭টি কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কার্যক্রম না থাকায় ভবনগুলো ইতমধ্যে প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে যে যার মতো ব্যবহার করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের কৃষি সেবা দোরগোড়াই পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি পরামর্শ কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেগুলো সচল রাখা হয়নি। কেবল অযত্ন আর অবহেলার নীরব সাক্ষী হয়ে ভবনগুলো আজও দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ কেন্দ্রগুলো এখন ভুতুড়ে বাড়ির পাশাপাশি মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার আশির দশকে কৃষকদের সহজে কৃষি তথ্য, পরামর্শ ও উপকরণ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ কেন্দ্র বা কৃষি তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন। তখন এসব কেন্দ্রে বীজ, সারসহ বিভিন্ন কৃষি সামগ্রী সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হতো। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিয়মিত এই ভবনগুলোতে বসে কৃষকদের ফসল উৎপাদন, রোগবালাই দমন ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন।
পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু কেন্দ্রে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতেন। এরইমধ্যে ওই কর্মকর্তারা যাতায়াত ছেড়ে দেন। ভবনগুলোতে লোকজনের চলাচলও বন্ধ হয়। ফলে সময়ের সাথে সাথে সংস্কারের অভাবে ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
দীর্ঘদিন কোনো তদারকি না থাকায় জেলার ৩২টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৫টি ভবনে কাজকর্ম সচল থাকলেও বাকি ভবনগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের লোকজন এসব ভবনগুলো দখলে নিয়ে ঠিকই ব্যবহার করে আসছেন।
আরও পড়ুনকালাইয়ের উদয়পুর ইউনিয়নের দুধাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন জানান, আগে ফসলের রোগবালাই দেখা দিলে অফিসে গেলেই পরামর্শ মিলত, এখন আর কেউ আসে না।
অফিসটি পরিত্যক্ত পড়ে আছে। মাদকসেবীরা সেখানে জড়ো হয়ে মাদক সেবন করে। কিছুদিন ধরে দেখছি, বিএনপি’র লোকজন ওই ভবন দলীয় কার্যালয় করে বসছেন। আগের মতো কৃষি অফিসাররা আবারও এখানে বসুক এমন দাবি করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হারুনুর রশীদ বলেন, ইউনিয়ন কৃষি পরামর্শ কেন্দ্রের ভবনগুলো বহু বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সে কারণে ভবনগুলোতে কার্যক্রম বন্ধ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। নতুন করে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভবনগুলো সংস্কার করে পুনরায় চালু করা হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জযপুরহাটের উপ-পরিচালক একেএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, আগে ইউনিয়ন কৃষি সেবা কেন্দ্রগুলোতে কর্মকর্তারা গিয়ে কৃষকদের মাঝে বীজসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য সরবরাহ করতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভবনগুলো সংস্কার না করায় বেশিরভাগ ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ৫টি ছাড়া বাকি ২৭টি ভবনের অবস্থা নড়বড়ে। সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভবনগুলো সংস্কার করে আবার চালু করা হবে।
মন্তব্য করুন

_medium_1766410042.jpg)



_medium_1766407770.jpg)


