আমাদের দেশে অনেক মা–বাবাই চান তাঁদের অনাগত সন্তানের গায়ের রং যেন উজ্জ্বল হয়। এই ধারণা থেকেই গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের খাবার গ্রহণের বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তানের ত্বকের রং মূলত নির্ভর করে বাবা–মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জিনের উপর। কেবল খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর গায়ের রং নির্ধারিত হয়— এমন ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
চিকিৎসকদের মতে, কেবল ত্বকের সৌন্দর্য নয়— গর্ভবতী মায়েদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সুস্থ, মেধাবী ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম নিশ্চিত করা। এজন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত জরুরি।
গর্ভাবস্থায় নারীদের স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধা বেড়ে যায়। এ সময়ে সুষম খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়ে, কারণ এসব খাবার একদিকে মায়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে, অন্যদিকে গর্ভের শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা গর্ভবস্থায় অ্যালকোহল গ্রহণ সম্পূর্ণ বর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ওজন প্রি–ম্যাচিউর শিশুর জন্মের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং শিশুর মেধা বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করলে গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কসহ অন্যান্য অঙ্গের বিকাশে সহায়তা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভের শিশু বাইরের শব্দ শুনতে পায় এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়াও দেখায়। তাই বিশেষজ্ঞরা মায়েদের শিশুর সঙ্গে কথা বলা, গান শোনানো, ধর্মীয় গ্রন্থ ও মনীষীদের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এসব অভ্যাস শিশুর মানসিক প্রশান্তিতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
এদিকে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী কয়েকটি খাবারের বিষয়ে মা–বাবাদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে—
জাফরান মেশানো দুধ: অনেকের বিশ্বাস, এটি শিশুর ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়ক।
আরও পড়ুন
নারিকেল: সাদা শাঁসের কারণে বর্ণ ফর্সা হওয়ার ধারণা রয়েছে, তবে অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
দুধ: গর্ভাবস্থায় অপরিহার্য খাদ্য, শিশুর শারীরিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডিম: পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে কুসুম বাদ দেওয়া ঠিক নয়।
চেরি ও বেরি জাতীয় ফল: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
টমেটো: এতে থাকা লাইকোপেন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
কমলা: ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ হওয়ায় শিশুর শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে চিকিৎসকরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছেন— এসব খাবার শিশুর ত্বক ফর্সা করবে এমন দাবির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এগুলো গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মা ও শিশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্মের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।