গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনে তারেক রহমান
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন কিছু সংকটময় মুহূর্ত রয়েছে, যখন জাতির অন্ধকারে একজন নেতার ব্যক্তিত্ব নতুন আলোতে উদ্ভাসিত হয়। তারেক রহমান ঠিক সেই ধরনের রাজনৈতিক উপস্থিতি একই সঙ্গে আলোচিত, অনিবার্য ও অপরিহার্য। দীর্ঘ নির্বাসনের প্রাচীর অতিক্রম করে তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিজস্ব অবস্থান দৃঢ় করেছেন। কাল তাঁর ৬১তম জন্মদিনে জানাই গভীর শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এই উপলক্ষে তাঁর সংগ্রাম, নেতৃত্ব, মানবিকতা ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গির মূল্যায়ন আজ সময়ের অপরিহার্য পাঠ। ২০০১-২০০৬ সময়কালে বিএনপি সরকারের দায়িত্ব পালনকালে উদীয়মান তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে তারেক রহমান দলকে আধুনিক সাংগঠনিক কাঠামোয় রূপ দিতে কাজ করেন। যুবসমাজকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা, স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব নির্বাচনে নতুন মানদন্ড স্থাপন এবং সাংগঠনিক প্রসার, সবক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সক্রিয়। রাজনৈতিক উত্তাপ, সন্ত্রাসবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ সংকট তাঁকে দ্রুত জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে এনে দাঁড় করায়। ২০০৭ সালের ১/১১ এর পর নির্যাতন, গ্রেপ্তার, শারীরিক যন্ত্রণা, চিকিৎসা, মিথ্যা মামলা এবং বাধ্যতামূলক নির্বাসন, এসবই তাঁর জীবনের কঠিন অধ্যায় হলেও এই অধ্যায়ই তাঁকে আরও দৃঢ়, অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গড়ে তোলে। নির্বাসনে থেকেও তাঁর সাংগঠনিক দর্শন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন ধারার সূচনা করেছে। দলকে ডিজিটাল যুগের কাঠামোয় রূপান্তর, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তৃণমূল ও জনগণের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ, বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পুনর্গঠন, এবং জনগণের আস্থা অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি, সবকিছুই তাঁকে আন্দোলনের কার্যকর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। ভোটারবিহীন ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনে গণতান্ত্রিক দলসমূহের ঐক্য এবং ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের প্রতিরোধ ধারায় তাঁর কৌশলগত নেতৃত্ব আন্দোলনের মেরুদন্ডে পরিণত হয়। ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলন যখন ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তখন তাঁর নেতৃত্ব আরও প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা হলো মানবিক দায়িত্ববোধ। নির্বাসনে থেকেও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, এতিমখানার শিশু, গুম-নিহত পরিবার, অসুস্থ ছাত্রনেতা ও স্বল্পআয়ের অসহায় মানুষের পাশে তাঁর নীরব দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের কাছে আস্থা, ভালোবাসা ও সম্মান তৈরি করেছে। এমনকি ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে ফাঁকা ক্যাম্পাসে কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তাদের চিকিৎসা ও সেবার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি জাতিকে সচেতন করেছেন। প্রায় ৮,০০০ কিলোমিটার দূর থেকেও তাঁর এই মানবিক উদ্যোগ তাঁকে রাজনীতির সীমা ছাড়িয়ে দায়িত্বশীল সমাজসচেতন ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যখন অন্যায়-অবিচারের অন্ধকার মানুষকে নিঃশব্দ করে তুলছিল, তখন তারেক রহমানের দৃঢ় নেতৃত্ব আন্দোলনের শিরায় রক্তের মতো শক্তি সঞ্চার করেছে। তবুও তিনি বিজয়কে নিজের কৃতিত্ব না বলে নিপীড়িত ও দেশপ্রেমিক জনগণের অর্জন হিসেবে দেখেছেন। আজ প্রমাণিত তিনি শুধু বিএনপির প্রধান নেতা নন, বরং রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রশাসনিক সংস্কার, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছতা, কর্মসংস্থানভিত্তিক অর্থনীতি ও প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রগঠনের যে রূপরেখা তিনি তুলে ধরছেন, তা নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনাকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
জনমানসে এখন সুসংহত হয়েছে বাংলাদেশের আগামীর রাজনৈতিক বাস্তবতা তারেক রহমানকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হবে। দীর্ঘ সংগ্রাম, অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও মানবিকতার সমন্বয়ে তিনি এক স্বতন্ত্র ও পরিপক্ব রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তুলেছেন। তাঁর ৬১তম জন্মদিন কেবল একটি জন্মদিন নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রায় এটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণার মুহূর্ত। তিনি যে পথ দেখাচ্ছেন, যে ভবিষ্যৎ কল্পনা করছেন তা জাতির সংকট, প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে আমাদের প্রার্থনা, এই জাতির স্বপ্ন, সংগ্রাম ও আত্মমর্যাদার পথে তারেক রহমানকে দান করুন দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য এবং সফলতার নব আলো। আজ আঠারো কোটি মানুষের হৃদয়ে একটাই প্রত্যাশা তিনি ফিরবেন বীরের বেশে, ন্যায়ের সৈনিক হয়ে নিজ মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে দাঁড়াতে। কারণ এই দীর্ঘ ঢের যুগ রাজপথের উত্তাপে কৃষক তার ক্ষেতে, শ্রমিক তার কারখানায়, আর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ সহ স্বৈরাচারের অবৈধ মসনদের অঙ্গনে একটিই স্লোগান বুকের ভেতর ধারণ করেছিলো তা হলো তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে! স্বৈরাচারের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে অনেক বুকের রক্ত শুকিয়ে গেছে, উত্তপ্ত রাজপথে শহীদের হাসি থেমে গেছে তবুও স্লোগান থামেনি, স্বপ্ন ভাঙেনি কারণ তারা জানে, ন্যায় একদিন ফিরে আসবেই। আজও লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর চোখে অম্লান আলো, ফিরে এসো আমাদের মাঝে, ফিরে এসো মাতৃভূমির জন্য, ফিরে এসো কৃষকের সোনালি ধানের শীষের হাসিতে। প্রতীক্ষার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ থমকে দাঁড়িয়ে আছে শুধু এক মুহূর্তের আশায়, যেদিন আকাশ কাঁপানো স্লোগান উঠবে তারেক রহমান বীরের বেশে এসেছে ফিরে বাংলাদেশে!
আরও পড়ুনলেখক
সুলতান আহমেদ রাহী
সভাপতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক








