সোনায় অ্যালার্জি বুঝবেন কীভাবে, কী করবেন
_original_1760184213.jpg)
বাঙালি নারীর কাছে সোনার গয়না শুধু অলঙ্কার নয়। অনেকের জন্য এগুলো সম্পদ, আবার অনেকের কাছে বিপদের দিনে নিরাপত্তার আশ্বাস। তাই তো যুগ যুগ ধরে সোনার গয়না সংগ্রহ করেন নারীরা।
বর্তমানে সোনার দাম বাড়তে বাড়তে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই অনেকে চাইলেও সোনার গয়না কিনতে পারছেন না। তবে দাম ছাড়াও সোনা পরতে না পারার আরেকটি কারণ হলো গোল্ড অ্যালার্জি।
অনেকেই জানেন না, কারও কারও জন্য সোনাই হতে পারে অস্বস্তি ও অ্যালার্জির কারণ। যেমন পরাগরেণু, ধুলা, পোষা প্রাণী বা খাবারে অ্যালার্জি হয়, তেমনি সোনার সংস্পর্শেও কারও কারও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে।
২০০১ সালে নর্থ আমেরিকান কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস গ্রুপের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪,১০১ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে প্রায় ৯.৫ শতাংশ মানুষের সোনাতে অ্যালার্জি ছিল। নারীদের মধ্যে এই হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা খাঁটি সোনা থেকে হয় না, বরং সোনায় মিশ্রিত নিকেল বা অন্য কোনো ধাতুর কারণে এ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
কীভাবে বুঝবেন আপনার সোনায় অ্যালার্জি আছে কি না?
সোনার অ্যালার্জির লক্ষণ অন্য অ্যালার্জির মতোই। যেমন—
>> গয়না পরার স্থানে ফুলে যাওয়া
>> ত্বকে লালচে ভাব বা র্যাশ
>> গয়না পরার স্থানে ফুলে চুলকানি
>> চামড়া উঠে আসা
>> গয়না পরার স্থানে ফোসকা বা গাঢ় দাগ
খেয়াল করবেন, প্রতিবার সোনা পরার পর একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হলে এটি সোনার অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তবে আসল অপরাধী অন্য কেউ
সোনার গয়না বানানোর সময় এর শক্তি বাড়াতে কিছু মাত্রায় অন্য ধাতু যোগ করতে হয়। এমন একটি ধাতু নিকেল। সব সোনায় নিকেল থাকে না। খাঁটি ২৪ ক্যারেট সোনায় নিকেলের পরিমাণ প্রায় নেই বললেই চলে, তাই সাধারণত এতে অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি কম। তবে ১৮ ক্যারেট বা তার কম ক্যারেটের সোনায় নিকেলের পরিমাণ বেশি থাকে। বিশেষ করে সাদা সোনায় নিকেল বেশি মেশানো হয়, ফলে এ ধরনের সোনায় অ্যালার্জির ঝুঁকি বেশি থাকে।
প্রতিকার কী?
আরও পড়ুনযদি সোনা পরে চুলকানি, ফোলা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়, তাহলে—
১. হালকা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ওষুধে সমাধান আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
২. তাৎক্ষণিকভাবে ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা কাপড় দিয়ে সেঁক নিলে আরাম মিলবে।
৩. ত্বক আর্দ্র রাখুন। শুষ্ক ত্বকে চুলকানির সমস্যা বেশি হয়।
৪. প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করলেও গুরুতর প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কী ধরনের গয়না পরবেন?
>> সম্ভব হলে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা ব্যবহার করুন।
>> হাইপোঅ্যালার্জেনিক বা নিকেল-ফ্রি গয়না ব্যবহার করুন।
>> বিকল্প হিসেবে টাইটানিয়াম বা স্টেইনলেস স্টিল গয়না বেছে নিতে পারেন।
>> ঘড়ির মেটাল স্ট্র্যাপের বদলে কাপড়, লেদার বা প্লাস্টিকের স্ট্র্যাপ ব্যবহার করুন।
>> নিয়মিত নিকেল বা সোনার সংস্পর্শে থাকলে গ্লাভস পরা অভ্যাস করুন।
কীভাবে বুঝবেন অ্যালার্জি আছে কি না-
যদি সন্দেহ হয় আপনার অ্যালার্জি আছে, তাহলে একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যান। সাধারণত তারা প্যাচ টেস্ট করে নিশ্চিত করেন, সত্যিই সোনা বা নিকেল অ্যালার্জি আছে কি না।
সোনা সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক হলেও, সবার জন্য এটি নিরাপদ নয়। সোনায় অ্যালার্জি পুরোপুরি সারানো না গেলেও সচেতনতা ও সঠিক অভ্যাসের মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই অ্যালার্জি থাকলে ঝুঁকি না নিয়ে বিকল্প গয়না ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মন্তব্য করুন