চলছে মাইকিং
জয়পুরহাটের কালাইয়ে হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নিতে আসছেন না চাষী ও ব্যবসায়ীরা
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করে ভাড়ার টাকা পরিশোধ না হওয়ায় হিমাগারে আলু নিতে আসছেন না চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বারবার নোটিশ করার পরও চাষী ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু নিতে না আশায় আলু বের করতে সময় বেঁধে দিয়ে মাইকিং করছে কর্তৃপক্ষ।
হিমাগারে আলু ঠান্ডা হওয়ার মেশিন বন্ধ করা হয়েছে মর্মে নির্ধারিত সময়ে আলু নিতে না এলে পরবর্তীতে ওই আলুর দায় নিবেনা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ভাড়ার টাকা আদায়ও করা হবে। তবে আলু বিক্রির টাকায় ভাড়া পরিশোধ না হওয়ায় হিমাগারে আসছেনা চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বারবার নোটিশ করেও তাদেরকে হিমাগারে নিয়ে আসতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আলু উৎসব অনুষ্ঠানে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুরো ডিসেম্বর হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে অনুরোধ জানালেও শনিবার থেকে জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হিমাগার কর্তৃপক্ষ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সংরক্ষিত আলু বের করার জন্য মাইকিং করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত মৌসুমে জয়পুরহাটে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৪৩ হাজার মে.টন। অতিরিক্ত যোগান এবং রপ্তানি কম হওয়ায় এবার নিম্ন দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার বিভিন্ন জাতের আলু বছর শেষে প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দাম মৌসুমের দামের চেয়ে অনেক কম।
ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী জেলার ১৯টি হিমাগারেই আলু সংরক্ষণ ছিল পরিপূর্ণ। মৌসুমে আলুর দাম কম বলে চাষী-ব্যবসায়ীরা হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছে। খাবার আলুর প্রয়োজন ছিল জেলায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। সিংহভাগ আলু বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। বছর জুড়ে বাজারে দাম কম হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষের ২০ শতাংশেরও বেশি আলু এখনও মজুত আছে।
অথচ বাজারে নতুন আলুর আমদানি হয়েছে। আগের আলু থাকায় নতুন আলু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। হিমাগার গেটে পুরাতন আলু ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি আর নতুন আলু ২০ থেকে ২১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের আলু থাকায় আগাম জাতের আলু চাষীরাও লোকসান গুনছেন।
আরও পড়ুনআলু চাষিরা জানান, গত মৌসুমে এক কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে ভাড়া ৬.৭৫ টাকা এবং লেবার, সুতলি, পরিবহন ও লোড-আনলোড মিলে আরও ২ টাকা পড়েছে। সবমিলে প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৭ টাকা।
বর্তমানে দাম মিলছে হিমাগার ভাড়াসহ কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা। আলু সংরক্ষণ করে লাভতো নয়ই, মুলধনও হারাতে হয়েছে। আলু নিতে হলে হিমাগার ভাড়া দিতে হবে, তাও আবার বস্তাপ্রতি পকেট থেকে ২০ টাকা গুনতে হবে। সে কারনে আলু নিতে হিমাগারে আসছেননা চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
কালাইয়ের পুনট কোল্ডস্টোরেজের সহকারি ব্যবস্থাপক এনামুল হক বলেন, হিমাগারগুলোতে গড়ে এখনও সংরক্ষনের ২০ শতাংশ আলু মজুত আছে। নতুন আলু বাজারে আসায় পুরাতন আলুর দাম ও চাহিদা কমে গেছে। আবার হিমাগারও পরিস্কার করতে হবে।
সবমিলে মালিকদের নির্দেশে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আলু নিয়ে যেতে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক আল মামুন মিয়া বলেন, বিষয়টি শুনেছি, কেন ১৫ ডিসেম্বর উল্লেখ করে হিমাগার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন

_medium_1765719036.jpg)





