ভিডিও শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:৫৯ দুপুর

নারী যখন ডিজিটালে বুলিংয়ের শিকার

নারী যখন ডিজিটালে বুলিংয়ের শিকার

নিজের আলোয় ডেস্ক ঃ প্রযুক্তি আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবার এ প্রযুক্তিই অনেক সময় নারীর জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ডিজিটাল সহিংসতা বলতে মূলত ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে নারীর পিছু নেওয়া, হয়রানি বা নির্যাতন করাকে বোঝায়।

এর রূপ এখন বহুমুখী। কারও সম্মতি ছাড়া অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সাইবার বুলিং, অনলাইন ট্রলিং এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের অপব্যবহার। যার মাধ্যমে ‘ডিপফেক’ পর্নোগ্রাফি বা বিকৃত ছবি তৈরি করে নারীর সম্মানহানি করা হচ্ছে।

এ ছাড়া অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়া (ডক্সিং), সবসময় নজরদারিতে রাখা (সাইবার স্টকিং), অনলাইনে গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে যৌন শোষণ এবং ‘ইনসেল’ বা নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের মাধ্যমে ঘৃণাত্মক বক্তব্য ছড়ানোর মতো ঘটনাগুলো ডিজিটাল সহিংসতার অন্তর্ভুক্ত।

অনেকে মনে করেন ডিজিটাল সহিংসতা কেবল অনলাইনেই সীমাবদ্ধ। এর প্রভাব বাস্তব জীবনেও অত্যন্ত ব্যাপক। অনলাইন হয়রানি প্রায়ই অফলাইনে বা বাস্তবজীবনে শারীরিক নির্যাতন, জবরদস্তি এবং এমনকি হত্যার (ফেমিসাইড) মতো ঘটনার জন্ম দেয়। ভুক্তভোগী নারী দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ট্রমা বা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটান। সমাজের সব স্তরের নারীই এর শিকার হচ্ছেন। তবে যারা জনসমক্ষে কাজ করেন যেমন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ বা নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার তারা সাইবার অপরাধীদের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। এ ছাড়া জাতিগত পরিচয়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে যারা এমনিতেই সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে আছেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় তারা আরও বেশি বৈষম্য ও আক্রমণের শিকার হন।

প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জগুলো ঃ ডিজিটাল সহিংসতা বন্ধ করা কঠিন। কারণ এর পেছনে বেশ কিছু কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত কারণ রয়েছে। প্রথমত, অনেক দেশেই ডিজিটাল সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার মতো কঠোর আইন নেই অথবা প্রযুক্তি খাতের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ খুবই দুর্বল। দ্বিতীয়ত, সামাজিক মাধ্যম বা টেক প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের দায়বদ্ধতা এড়ানোর চেষ্টা করে। তৃতীয়ত, অপরাধীরা ইন্টারনেটে নাম-পরিচয় গোপন রাখার সুযোগ পায় এবং অন্য দেশে বসে অপরাধ করে, যা তাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন করে তোলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ, যা নিত্যনতুন উপায়ে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা ব্যবস্থা বা সাপোর্ট সিস্টেমের অভাবও একটি বড় বাধা।

আরও পড়ুন

বৈশ্বিক অগ্রগতি ও আশার আলো ঃ তবে আশার কথা হলো, দীর্ঘদিনের নারী অধিকার আন্দোলনের ফলে বিশ্বজুড়ে এই সহিংসতা প্রতিরোধে নতুন গতি এসেছে। ২০২৪ সালে ‘গ্লোবাল ডিজিটাল কম্প্যাক্ট’ গৃহীত হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা ও এআই ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘের প্রথম সমন্বিত মানদণ্ড। একই বছর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ‘সাইবার ক্রাইম কনভেনশন’ গ্রহণ করেছে, যা ডিজিটাল সহিংসতা মোকাবিলায় একটি আইনগত বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক দলিল। এ ছাড়া আফ্রিকান ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা ডিজিটাল স্পেসে নারীর সুরক্ষায় নতুন নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান কমিশনও প্রযুক্তিনির্ভর সহিংসতা পরিমাপের বৈশ্বিক পদ্ধতি তৈরির কাজ শুরু করেছে।

ডিজিটাল অপব্যবহার বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ প্রচারণায় সব দেশের সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে, যেন তারা ডিজিটাল সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ক্ষতিকর কনটেন্ট দ্রুত অপসারণ করতে হবে এবং স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে দাতা সংস্থাগুলোকে নারীবাদী সংগঠন ও ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে।

ব্যক্তি পর্যায়েও অনেক কিছু করার আছে। ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ১৬ দিন ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার হওয়া যায়। অনলাইনে নারীবিদ্বেষী আচরণের প্রতিবাদ করা, ভুক্তভোগীকে দোষারোপ না করে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং বিশেষ করে পুরুষদের ডিজিটাল সহিংসতাবিরোধী প্রচারণায় অংশ নেওয়া জরুরি। এ আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ‘কমলা’ রংকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যা একটি সহিংসতামুক্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশার প্রতীক। নাগরিক সমাজ, তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষাবিদ এবং স্থানীয় নেতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে ডিজিটাল দুনিয়াকে নারী ও কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ করে তুলতে।

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারী যখন ডিজিটালে বুলিংয়ের শিকার

ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনেই খালেদা জিয়ার রোগের সূচনা : ফখরুল  

ফরিদপুরে মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

ভাঙ্গায় বাসের ধাক্কায় ইজিবাইকের ৩ যাত্রী নিহত

দেশজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে ‘খিলাড়ি’

দুর্বৃত্তদের হামলায় ব্যবসায়ী নিহত