শেখ হাসিনার মামলার রায় নিয়ে রয়টার্সকে যা বললেন ছেলে জয়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তবে ভারতে নির্বাসনে থাকার কারণে শেখ হাসিনা নিরাপদে আছেন বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা না তোলা হলে আগামী বছরের নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে। খবর : আল-জাজিরা
রোববার (১৬ নভেম্বর) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সোমবার ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের আন্দোলনে দমন-পীড়নের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি রায় কী হবে। তারা সরাসরি সম্প্রচার করবে। তারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে এবং সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেবে।’ ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তিনি আরও বলেন, ‘ওরা আমার মায়ের কিছুই করতে পারবে না। তিনি ভারতে নিরাপদ আছেন এবং ভারত তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিচ্ছে।’
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে নির্বাসনে যান ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সে বছরের বিক্ষোভে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়, যার বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। পরবর্তীতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তবে এ সব কিছুই তিনি অস্বীকার করে মামলাগুলোকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেন।
সজীব ওয়াজেদ রয়টার্সকে বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আধিপত্য বজায় রেখেছে। নিষিদ্ধ থাকলে তাদের সমর্থকেরা নির্বাচন হতে দেবে না। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। আমাদের বিক্ষোভ আরও তীব্র হবে এবং প্রয়োজন হলে আমরা সবকিছুই করব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু না করলে সহিংসতা বাড়বে।’
আরও পড়ুনআওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলায় তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এক মুখপাত্র সজীব ওয়াজেদের সতর্কাবার্তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘নির্বাসিত নেতাদের যে কোনো সহিংসতামূলক উসকানি দায়িত্বজ্ঞানহীন ও নিন্দনীয়।’ এর আগে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছিলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে, নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। এখন যা ঘটছে তা আসলে আমার মা এবং আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা।’
এদিকে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ঢাকায় সহিংসতা তীব্রতর হয়েছে। রোববার ঢাকা শহরজুড়ে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। এর আগে গত ১২ নভেম্বর একদিনেই ৩২টি বিস্ফোরণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়। বাসে অগ্নিসংযোগ, গ্রেপ্তার, নাশকতার অভিযোগ ও সহিংসতা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। নিরাপত্তা জোরদারে মোতায়েন করা হয়েছে ৪০০-এর বেশি বর্ডার গার্ড সদস্য। রাজধানীর স্কুলগুলো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান আল জাজিরাকে বলেন, ‘হাসিনা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদ্যুতের খুঁটির মতো স্পর্শকাতর। তিনি ভারত থেকে অনলাইনে বক্তব্য দিলেও সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনা পুত্রের নির্বাচনে বাধা দেওয়ার হুমকি মূলত সহিংসতার ইঙ্গিতই বহন করছে।’
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক









