ইমান ভঙ্গের ৫ কারণ
মুফতি সৈয়দ হামদুল্লাহ লাবীব
একজন মুসলমানের জীবনে ইমানের মূল্য সবচেয়ে বেশি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে ইমানের অবস্থান। সে সর্বহারা হলেও শুধু ইমান হৃদয়ে ধারণ করে বেঁচে থাকতে পারে, ইমান ছাড়তে পারে না। ইমান ও বিশ্বাসী জীবন আলোকিত জীবন। কুফর ও অবিশ্বাসী জীবন তিমিরাচ্ছন্ন। ইমান সত্য, কুফর মিথ্যা। ইমান আলো, কুফর অন্ধকার। ইমান আখেরাতে মুক্তির প্রধান চাবিকাঠি, কুফর জাহান্নামের অনন্ত শাস্তি ভোগ করার কারণ। ঔদ্ধত্য, অবহেলা ও উদাসীনতার ফলে অনেকে ইমানের মতো অমূল্য সম্পদ হারিয়ে ফেলে। এখানে মোটা দাগে ইমান ভঙ্গের কয়েকটি কারণ তুলে ধরলাম:
১. আল্লাহর বিধানকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা
আল্লাহর রাসুলের (সা.) আনীত দ্বীনকে, দ্বীনের কোনো অকাট্য বিশ্বাস বা বিধানকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তারা যদি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও মিথ্যাবাদী বলেছিল, তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাদি, গ্রন্থাবলী ও আলোকদীপ্ত কিতাবসহ রাসুলগণ এসেছিলেন। তারপর যারা কুফরি করেছিল, তাদের আমি পাকড়াও করেছিলাম; তখন কেমন ছিল আমার শাস্তি? (সুরা ফাতির: ২৫, ২৬)
২. অহঙ্কার এবং ঔদ্ধত্যের কারণে আল্লাহর আনুগত্য না করা
যেমন ইবলিস কুফরি করেছিল অহংকার ও ঔদ্ধত্যের কারণে। সে জানতো আল্লাহ তাআলাই প্রকৃত সত্য রব। কিন্তু অহংকার করে সে আল্লাহর নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে। এটা ওই ব্যক্তির অবস্থার মতো, যে জানে, ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম; আল্লাহ তায়ালার কাছে যে ধর্ম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়, যে ধর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে কার্যকরী। এত সব কিছু জানার পরও সে ইসলাম বর্জন করে মানব রচিত কোনো ধর্ম কিংবা মতবাদ গ্রহণ করে নিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন তারা সবাই সিজদা করল, ইবলিস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহংকার করল। ফলে সে হলো কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা বাকারা: ৩৪)
আরও পড়ুন৩. আল্লাহর দ্বীন প্রত্যাখ্যান করা
আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত পুরো দ্বীন প্রত্যাখ্যান করা। অথবা ইসলামের অকাট্য কোনো বিশ্বাস বা বিধান প্রত্যাখ্যান করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তারা অন্যায় ও অহংকার করে নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখ্যান করল অথচ তাদের অন্তর তা নিশ্চিত বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখ, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল। (সুরা নামল: ১৪) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তারা যা বলে তা তোমাকে দুঃখ দেয়। কিন্তু তারা তো (মূলত) তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে না, বরং জালিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে। (সুরা আনআম: ৩৩)
৪. আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া
নবীজির (সা.) আনীত আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। সত্যায়ন কিংবা অস্বীকার না করে কেবল এড়িয়ে চলা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তার চেয়ে বড় জালিম আর কে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সুরা সাজদাহ: ২২)
৫. দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা
নবীজির (সা.) আনীত আল্লাহ তাআলার দ্বীন বা দ্বীনের কোনো অকাট্য বিশ্বাস বা বিধানের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা, দৃঢ় বিশ্বাস না করা, আবার অস্বীকারও না করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা বলল, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে যা দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে, তা আমরা অস্বীকার করলাম। আর তোমরা আমাদের যে বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দিচ্ছ, সে বিষয়ে আমরা ঘোর সন্দেহে রয়েছি। (সুরা ইবরাহিম: ৯)
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক









