আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হন: উপদেষ্টা আসিফের জবানবন্দি

চব্বিশের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, গুলি চালানো পুলিশ সদস্য ও কমান্ড কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে সাক্ষী হিসেবে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন শহীদ হয়েছেন। শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। আমি তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।
রাষ্ট্রপক্ষের ১৯তম সাক্ষী হিসেবে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রথমদিনের জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান আসিফ মাহমুদ। প্রথমদিনের জবানবন্দি শেষে আদালত পরবর্তী জবানবন্দির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দিন ঠিক করেছেন।
আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্য দেন তিনি। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ছিলাম।
আরও পড়ুনআন্দোলন চলাকালে একপর্যায়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে যোগাযোগ শুরু করে। ১৯ জুলাই তুলে নিয়ে পাঁচ/ছয়দিন বন্দি রাখা হয়। এরপরে ২৪ জুলাই ছেড়ে দেয়। তার পরে আবার গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার সময় আমাদের বারবার বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের সেখানে আনা হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যার নির্দেশনা দিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে তারা (ডিবি) দয়া করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে আমাদের হুমকি দিতো।’
চানখাঁরপুলের ৫ আগস্ট হতাহতের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘ওইদিন বেলা ১১টার দিকে আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তখন চার পাঁচশ লোক মিছিল করছিল। সেখানে আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন। পরে জানতে পারি, সেখানে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শর্টগান ব্যবহার করে। সেদিন বেলা দেড়টার দিকে আমরা জানতে পারি, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।’
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামীম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা। এছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্যে চারজন গ্রেফতার ও চার জন পলাতক।
মন্তব্য করুন