ইসরায়েলি সেনাদের বোমা হামলায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন গাজাবাসী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দুই বছরের মধ্যে গাজা সিটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। অবিরাম বোমা ও গুলির মুখে হাজারো বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এ হামলাকে “ভয়াবহ” বলে আখ্যা দিয়েছেন। খবর আল জাজিরার। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “গাজা জ্বলছে”। চারদিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসবাবপত্র বোঝাই ভ্যান, গাধার গাড়ি আর হাঁটা পথে মানুষ উপকূলীয় আল-রাশিদ সড়ক ধরে দক্ষিণমুখী যাত্রা শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উপকূলীয় সড়কে পালিয়ে যাওয়া যাত্রীবাহী যানবাহনেও বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এদিন শহরের অন্তত ১৭টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে পূর্ব তুফাহ এলাকার আয়বাকি মসজিদও রয়েছে।একই সঙ্গে বিস্ফোরক বহনকারী রোবট দিয়ে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংস চালায় ইসরায়েলি সেনারা। মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেড মনিটর জানিয়েছে, সেনারা অন্তত ১৫টি রোবট ব্যবহার করছে, প্রতিটি দিয়ে একসঙ্গে ২০টি ঘরবাড়ি ধ্বংস করা সম্ভব।

প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজা সিটিতে ফিরে এসেছিলেন। এর মধ্যে কতজন এখনও রয়েছেন তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পালিয়েছে। গাজার সরকারি তথ্য অফিস বলছে, একই সংখ্যক মানুষ শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিমে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং ১ লাখ ৯০ হাজার পুরোপুরি শহর ছেড়েছেন।তবে দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের জন্যও পরিস্থিতি ভয়াবহ। রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষের ভিড়ে ভরপুর আল-মাওয়াসি ক্যাম্পেও বোমা মেরেছে ইসরায়েল। ফলে অনেকেই আবার গাজা সিটিতে ফিরে এসেছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সেনারা ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ির অগ্রযাত্রার ফুটেজ প্রকাশ করেছে। সেনা মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন স্বীকার করেছেন, পুরোপুরি গাজা সিটি দখলে নিতে তাদের কয়েক মাস সময় লাগবে। মঙ্গলবার ভোর থেকে সারাদিনে অন্তত ১০৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন
মঙ্গলবার জাতিসংঘের অনুসন্ধান কমিশন জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণহত্যা। দুই বছরে অন্তত ৬৪ হাজার ৯৬৪ জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি নেতাদের প্রকাশ্য বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে তারা ফিলিস্তিনিদের একটি জাতি হিসেবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে কাজ করছে।ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে জানিয়েছে, “গাজার পরিস্থিতি আজ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে, যেখানে দেরির কোনো সুযোগ নেই।”

আন্তর্জাতিক মহল থেকেও সমালোচনা বাড়ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ যুদ্ধকে “নৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনি দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য” বলেছেন। ফ্রান্স ইসরায়েলকে “ধ্বংসাত্মক অভিযান বন্ধ করে আলোচনায় ফেরার” আহ্বান জানিয়েছে।আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্স বলেছেন, “যারা গণহত্যা চালাচ্ছে এবং যারা গণহত্যার সহযোগী হিসেবে অস্ত্র দিচ্ছে, তাদের জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কার করা উচিত। এদের সঙ্গে বাণিজ্যও অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক
_medium_1763406383.jpg)

_medium_1763385602.jpg)



_medium_1763391417.jpg)
_medium_1763412001.jpg)