পুরান ঢাকায় ‘সন্ত্রাসী’ মামুনকে গুলি করা দুই শুটার গ্রেফতার
রাজধানীর পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন (৫৫) হত্যায় অংশ নেওয়া দুই শুটারকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা দুজনই পেশাদার শুটার হিসেবে কাজ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গ্রেফতার দুজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তারিক সাইফ মামুনকে। স্বজনরা জানান, পুরোনো একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে রাজধানীর আফতাবনগরের বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা মামুনকে গুলি করে হত্যা করে। দুই বছর আগেও রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
পুলিশ বলছে, এই মামুন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ‘ইমন-মামুন’ গ্রুপের অন্যতম প্রধান এই মামুন। একসময় ছিলেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী। অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবেই পুলিশের খাতায় নিহত মামুনের নাম রয়েছে। পুলিশ বলছে, সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে হত্যার শিকার হওয়া মামুন একসময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন। অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। মামুন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ বলছে, দুর্বৃত্তরা খুব কাছ থেকে মামুনকে গুলি করেছে। আরাফাত হোসেন নামের একজনের বর্ণনানুযায়ী, দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেল থেকে নেমে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়েন। প্রথম গুলিটি হাসপাতালের ওপরের দিকে করেন। সেটি সোজা তিনতলার কাচে গিয়ে লাগে। এরপর মামুনের বুকের ডান পাশে গুলি করেন। তার হাতেও গুলি লাগে। তাকে পেছন থেকে গুলি করা ব্যক্তিরা মাস্ক পরা ছিলেন। তার মধ্যে একজনের মাথায় ছিল ক্যাপ। ছয় থেকে সাতটি গুলি ছোড়েন তারা।
ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মামুন সকাল ১০টা ৫২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে গলি থেকে মূল সড়কের দিকে একা হেঁটে যাচ্ছিলেন। এরপর ১০টা ৫৩ মিনিট ১১ সেকেন্ডে তাকে সড়ক থেকে দৌড়ে ফিরতে দেখা যায়। এসময় আশপাশের পথচারীরা গুলির শব্দে ছোটাছুটি করতে থাকেন। তিন সেকেন্ড পর দেখা যায়, দুই ব্যক্তি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে আসছেন। তারা মামুনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। পরে দুজন অস্ত্র কোমরে গুজে দৌড়ে চলে যান। তখন সড়কে অনেকেই চলাচল করছিলেন।
আরও পড়ুনন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ বলেন, হঠাৎ হাসপাতালের সামনে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরে শব্দ শুনে সবাই প্রধান ফটকের সামনে এসে মামুনকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তাকে উদ্ধার করে এই হাসপাতালেই আনা হয়। তবে অবস্থার অবনতি হতে থাকলে সেখান থেকে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মামুনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ফারুক হোসেন জানান। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ২০ বছরের বেশি সময় জেল খেটে ২০২৩ সালে জামিনে মুক্তি পান মামুন।
জামিনের তিন মাসের মাথায় ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় তাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় একদল সন্ত্রাসী। তখন পাশ দিয়ে যাওয়া মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীলের মাথায় একটি গুলি লাগে। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভুবন মারা যান। এ ঘটনার পর পুলিশ বলেছিল, গুলি ছুড়েছিলেন কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের লোকজন।
ইমন ও মামুন একসময় ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার আতঙ্ক ছিলেন। তাদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল ‘ইমন-মামুন’ বাহিনী। তারা দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক



_medium_1762874514.jpg)

_medium_1762872461.jpg)



