প্রাকৃতিক দুর্যোগে লালমনিরহাটের কৃষকদের মাথায় হাত
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : দু’দিনের ব্যবধানে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা দুই দিনের হালকা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসের ফলে অনেক ক্ষেতের ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। কিছু ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের।
জানা যায়, তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদী বেষ্টিত লালমনিরহাটের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে জেলায় মোট ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হলেও পুরোদমে ফসল মাড়াই শুরু হতে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন বাকি। ঠিক এমন সময়েই হানা দিয়েছে বৈরী আবহাওয়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির সাথে বাতাসে অনেক ক্ষেতের উঠতি আমন ধান নুয়ে পড়ে পানিতে ডুবে আছে। কৃষকরা বলছেন, এই ধান আর ঘরে তোলার মতো অবস্থায় নেই। নুয়ে পড়া পাকা ধান কোনোমতে কেটে নিলেও আধাপাকা ধানের পুরোটাই নষ্ট হওয়ার পথে। শুধু ধান নয়, গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য ধানের খড়ও পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের।
অনেক কৃষককে দেখা যায়, নুয়ে পড়া ধানগাছগুলো আঁটি বেঁধে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে। কেউ কেউ আবার ক্ষেত থেকে পানি সেচে বের করে দিচ্ছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাদের।
আরও পড়ুনহাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক ইমরান আলী বলেন, গতবারের বন্যায় আমনের যে ক্ষতি হয়েছিল তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হলো এই বাতাসে। বন্যার পানি থেকে বেঁচে যাওয়া যেটুকু আশা ছিল, তাও নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকের বিপদ চারদিকে। ধান তো ঘরে উঠবেই না। এবার বুঝি না খেয়েই মরতে হবে।
এমন দুর্যোগের মুহূর্তে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের পাশে না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক। তাদের অভিযোগ, মাঠকর্মীরা সরেজমিনে না এসে ঘরে বসেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছেন। এবিষয়ে আজ রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে কথা হলে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাইখুল আরেফিন জানান, চলতি বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ায় নুয়ে পড়া আমন ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছি। এসময় তিনি আরও বলেন, যেসব ধান নুয়ে পড়েছে, সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিলে ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।
মন্তব্য করুন










