১২ নির্দেশনা
পর্যটকদের জন্য আজ থেকে উন্মুক্ত সেন্টমার্টিন; তবে, চলবে না জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর আজ ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। ফলে আজ থেকে দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারবেন পর্যটকরা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে মানতে হবে ১২টি নির্দেশনা। নভেম্বর মাসে থাকছে না দ্বীপে রাতযাপনের সুযোগও।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। আইনগত বিধি-নিষেধ থাকায় উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ নেই।এদিকে সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত হওয়ার প্রথম দিন থেকেই ওই রুটে জাহাজ না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা। প্রাথমিকভাবে নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে এ দিন ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ও ‘বারো আউলিয়া’ নামে দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিন রুটে চলার কথা থাকলেও, জাহাজ মালিকরা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর গণমাধ্যমে বলেন, সবকিছু প্রস্তুত থাকার পরও ১ নভেম্বর থেকে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করবে না। কারণ যদি কোনো জাহাজ সকাল ৭টায় কক্সবাজারের বিআইডব্লিউটিএ জেটি থেকে ছাড়ে, সেটি দ্বীপে পৌঁছায় প্রায় দুপুর ২টার দিকে। আমাদের জাহাজগুলোর কক্সবাজার থেকে দ্বীপে পৌঁছাতে প্রায় সাত ঘণ্টা লাগে। কোনো কোনোটির লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। তাই রাতযাপনের ব্যবস্থা ছাড়া একই দিনে দ্বীপে যাওয়া-আসা প্রায় অসম্ভব। আমরা ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ সে সময় দ্বীপে রাতযাপনে বাধা থাকবে না।
দেশের একমাত্র এই প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এবারও নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দ্বীপটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিনে এক হাজার ৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। অতীতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ, বিপুল পর্যটকের সমাগম ও পরিবেশ দূষণের কারণে দ্বীপটি পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে গত ৯ মাস পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ থাকায় দ্বীপে জীববৈচিত্র্যের বিস্তার ও পরিবেশের উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মহিবুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের জন্য পর্যটকদের যে ১২টি নির্দেশনা মানতে হবে তার মধ্যে অন্যতম ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করা। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে। এসব নিশ্চিত করার জন্য ট্যুরিজম বোর্ড সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

মানতে হবে যে ১২ নির্দেশনা
সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১২টি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাতযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত থাকবে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যে কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন







_medium_1761918182.jpg)


