আজ বিজয়া দশমী: বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীদুর্গাকে বিদায়
আলোর রোশনায়, ঢাক-ঢোল‘র বোল আর উৎসবে মাতোয়ারা বগুড়ার সব পূজামণ্ডপ

স্টাফ রিপোর্টার: নানান রঙের আলোর রোসনায় আর গান-ঢাক-ঢোলের বোলে বগুড়া ৬৮১ পূজা মণ্ডপ উৎসবে মাতোয়ারা। সনাতন ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সারা শহর উৎসব মুখর পরিবেশ। পূজা মণ্ডপ এলাকায় দিনভর গান, পূজা, প্রসাদ বিতরনের মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন ভক্তরা।
উপভোগ করছেন প্রতিমার শৈল্পিকতা, আলোক সজ্জা ও বিভিন্ন ধরনের ব্যতিক্রমী সাজ। দিনে তো বটেই গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুর দেখছে ভক্তকূল। সেই সাথে মণ্ডপে মণ্ডপে উলুধ্বনি দিচ্ছে, শঙ্খ, কাঁসা ও ঢাকের বাদ্য বাজছে। আজ বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
গত বোরবার মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় হিন্দু সম্প্রদায়েরর সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা। গত বারের চেয়ে এ বারের পূজো জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে। গত বছর রাজনীতির পট পরিবর্তনের জন্য একটু ঝিমুনি ভাব থাকলেও এবার দেশে মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে এবং মানুষ নির্ভিগ্নে পালন করছে তাদের বড় উৎসব। তাই বাধভাঙ্গা আনন্দে মেতে উঠেছে প্রতিটি হৃদয়।
গতকাল ছিল মহানবমী। নবমী হল দেবী দুর্গার আরাধনার নবম দিন, যা দুর্গা পূজোর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দিনে দুর্গার নবম রূপ দেবী সিদ্ধিদাত্রীর পূজা করা হয়। ভোর থেকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঝিরঝিরে হয়ে বর্ষণ করেছে দুপুরের আগ পর্যন্ত। তবে ক্ষণিকের বৃষ্টি পূজোর আবেগকে ফিকে করতে পারেনি।
পারেনি প্রতিমা দর্শনের ঝোঁক কমাতে। ছাতা হাতে বা ভিজেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছেন দর্শনার্থীরা। মহা নবমী থেকেই মন খারাপ হতে থাকে ভক্তবৃন্দের। এই দিনটিকে সাধারণত দুর্গা পূজোর শেষ দিন হিসেবে ধরা হয়, কারণ এর পরের দিন, অর্থাৎ দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
এদিকে দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে বগুড়া শহর ও শহরতলীতে চলছে উৎসবের আমেজ। দিনে তো বটেই রাতের বগুড়া হয়ে উঠেছে বিভিন্নধরণের আলোকচ্ছটাই উজ্জল। এর মধ্যে বগুড়ার ডাল পট্টির মণ্ডপ সবচেয়ে আকর্ষনীয় পূজা মণ্ডপ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ভক্তদের মাঝে। এখানকার মণ্ডপের আশে পাশে রাস্তা বড় বড় বিল্ডিং সেজেছে আকর্ষনীয় ভাবে। গোটা এলাকায় একটা উৎসব উৎসব ভাব চলছে। রাতে এই মণ্ডপে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন সবচেয়ে বেশি।
আরও পড়ুনঅন্যদিকে সাজসজ্জার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মালতিনগর পূজা মণ্ডপ। এবছর এই মন্দির সেজেছে আর্টিস্টিকভাবে। দেশীয় কূলা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ডিজাইনে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে মণ্ডপসহ গেট পর্যন্ত। সাজসজ্জা যাই হোক না কেন এই মন্দিরের অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এবারও। পূজা মণ্ডপ ঘিরে বসেছে মেলা। মেলায় বিক্রি হচ্ছে মাটির তৈজসপত্র।
কসমেটিকস, খেলনা সামগ্রী, চুড়ি ফিতা ছাড়াও দোকান বসেছে বিভিন্ন খাবারের।শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা,চরকি। মণ্ডপে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা। শুধুমাত্র এই পূজামণ্ডপগুলোকে কেন্দ্র করে নয় এরকম শহরের প্রায় প্রত্যেকটি মন্দিরে পূজা অর্চনাকে কেন্দ্র করে বসেছে মেলা। আয়োজকরা যার যার মত করে প্রতিটি মণ্ডপ দর্শনীয় করে সাজিয়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মিলন মেলা।
এদিকে, বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এবছর জেলার ১২টি উপজেলায় ৬৮১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও মন্দির কমিটির পক্ষ থেকেও ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আগামীকাল বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবাবের দুর্গোৎসব। এবার দেবীর আগমণ হবে গজে (হাতি) এবং গমন হবে দোলায় (পালকি) চড়ে। গজে দেবীর আগমন শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য শ্যামলার প্রতীক, অন্যদিকে দোলায় গমন মহামারী বা মড়কের আশঙ্কা নির্দেশ করে এমনটায় জানিয়েছেন সনাতন ধর্মবলম্বীরা।
মন্তব্য করুন