উমরা পালনের আগে যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে

উমরা পালন একটি ফজিলতপূর্ণ বিশেষ ইবাদত। এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে নতুন করে বান্দার সম্পর্ক তৈরি হয় এবং গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের সুযোগ তৈরি হয়। উমরা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা মক্কায় যান। দীর্ঘ পথ সফর করেন। দীর্ঘ পথের এই যাত্রা শুধু কোনো ভ্রমণ নয়, বরং তা জীবন পরিবর্তন আনার একটি উপলক্ষ। পবিত্র এই সফরে যাওয়ার আগে আত্মিক এবং মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরি। তেমন কয়েকটি বিষয় হলো-
নিয়ত শুদ্ধ করা: উমরার মতো ইবাদতে যাওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- নিয়ত পরিশুদ্ধ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে তো আদেশই করা হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে, তার প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে।’ -সূরা আল-বায়্যিনাহ: ৫
মহান এই ইবাদতের আগে নিজের মনকে পুরোপুরি প্রস্তুত করুন। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তার ক্ষমা লাভের জন্য উমরা করুন। খ্যাতি কিংবা নিজেকে প্রকাশের জন্য উমরা নয়। এ বিষয়ে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।
ক্ষমা প্রার্থনা: উমরার মাধ্যমে একজন মুসলিমের আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভের মহাসুযোগ তৈরি হয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ বা উমরা করল এবং কোনোরূপ অশ্লীল কথা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়নি, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।’ -সহিহ বোখারি: ১৫২১
সুতরাং উমরা করার আগে নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করুন, যেন হাদিসে বর্ণিত আল্লাহ তায়ালার সেই ক্ষমা লাভ করতে পারেন এবং জীবনকে নতুন করে শুরু করতে পারেন।
ইসলামি স্কলাররা বলেন, এ জন্য প্রতিটি আমলের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুধাবন জরুরি। উমরার প্রতিটি আমল যেমন- ইহরাম পরা, পবিত্র কাবার তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ- সবকিছুর গভীর অর্থ রয়েছে। যেমন- সাঈ করার সময় মনে রাখুন, আপনি হজরত হাজেরা (আ.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন, যিনি আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা করেছিলেন। প্রতিটি আমল যেন কেবল শারীরিক কার্যকলাপ না হয়, বরং হৃদয়ের ইবাদত হয়।
মক্কা ও মদিনার পবিত্রতা উপলব্ধি করা: মক্কা ও মদিনা শুধু দুটি শহর নয়, বরং ইসলামের কেন্দ্র। কাবায় অবস্থিত কাবা আল্লাহর ঘর এবং মদিনায় মসজিদে নববি ও নবী কারিম (সা.)-এর রওজা মোবারক অবস্থিত। এই শহরগুলোতে অবস্থানকালে বিনয়ের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত। প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদতের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
সফরের ক্লান্তিতে ধৈর্য ধরা : উমরার জন্য অনেকেই দূর দেশ থেকে সফর করেন। দীর্ঘ পথের সফরের কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। পুরো সফরে বিমানবন্দরে অপেক্ষা, ভিড়, তীব্র গরম ইত্যাদির কারণে ক্লান্তি তৈরি হতে পারে। এই সময় ধৈর্য ধারণ করা এক ধরনের ইবাদত। মনে রাখতে হবে, এই কষ্টগুলোও গুনাহ মোচনের একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আরও পড়ুনআরেকটি কথা, উমরার সফর আপনার প্রত্যাশামতো না-ও হতে পারে। কিছু অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ। ভরসা রাখুন, এই সফরের প্রতিটি ধাপ আপনাকে আল্লাহর আরও কাছাকাছি নিয়ে যাবে। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার পরিকল্পনার ওপর আস্থা রাখুন, এই আস্থা আপনাকে সাফল্য দেবে- ইনশাআল্লাহ।
সব সময় দোয়া ও আল্লাহকে স্মরণ করা: উমরা করার সময় আল্লাহর দরবারে দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি অত্যন্ত মূল্যবান একটি সময়। কাবা ঘরের সামনে, সাঈ করার সময় কিংবা মসজিদে হারামে নামাজে দাঁড়িয়ে, হৃদয় থেকে দোয়া করুন। নিজ, পরিবার, উম্মাহ ও গোটা মানবজাতির জন্য দোয়া করুন।
আল্লাহর রহমত সীমাহীন: আপনার অতীত যতই পাপ-পঙ্কিলতায় পূর্ণ থাক না কেন, আল্লাহর দরজায় ফিরে আসা কখনোই দেরি হয়ে যায় না। কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, দয়াময়। তিনি যদি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতে চাইতেন, তবে তাদেরকে অচিরেই শাস্তি দিতেন, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক স্থিরীকৃত সময়, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য তারা কোন আশ্রয়স্থল পাবে না।’ -সূরা কাহাফ: ৫৮
বিনয়ের সঙ্গে সফর করা: উমরা যাওয়ার সুযোগ পাওয়া অনেক বড় নেয়ামত। মুসলমানেরা উমরায় গিয়ে নবী কারিম (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করেন। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করে, সে যেন আমার জীবিত অবস্থায় আমাকে সাক্ষাৎ করল।’ -সহিহ বোখারি
মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করার সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন যে, তিনি আপনাকে এমন মহান সফরের সুযোগ দান করেছেন। পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হওয়া: উমরা শুধু একটি সফর নয়, এটি আত্মিক পরিবর্তনের এক সুবর্ণ সুযোগ। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ বা উমরা পালন করে এবং কোনো গুনাহে লিপ্ত হয় না, সে নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরে আসে।’ -সহিহ বোখারি
চেষ্টা করুন এই সফর যেন আপনাকে বদলে দেয় এবং আল্লাহর পথে পরিচালিত করে।
মন্তব্য করুন