পুলিশের পোশাকে মহাসড়ক থেকে একরাতে তিনটি যানবাহনে ছিনতাই
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার মহাসড়ক যেন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। গত সোমবার গভীররাতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে পুলিশের পোশাক পড়ে একের পর এক তিনটি যানবাহন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে দুটি পণ্যবাহী ট্রাক ও একটি প্রাইভেট কার। তবে হাইওয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকৃত একটি ট্রাক উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও বাকি দুটি যানবাহন এবং ছিনতাইকারীরা এখনো অধরা।
সোমবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ভোর রাত সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে। বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও হাইওয় পুলিশ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ভিআইপি ট্রান্সপোর্ট একটি ট্রাক ( কুষ্টিয়া ঢ-১১-০২০৪) মালামাল নিয়ে ঢাকা থেকে বগুড়ার দিকে আসার পথে সোমবার রাত দেড়টার দিকে সিরাজগঞ্জ রোড এলাকায় একটি মাইক্রোবাস থেকে পুলিশের পোশাকপড়া লোকজন সংকেত দিয়ে ট্রাকটি থামানো হয়।
এরপর ট্রাকের চালক হৃদয় হোসেন ও হেলপার জাহিদ মিয়াকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে হাতকড়া লাগানো হয়। মাইক্রোবাসে থাকা সাদা পোশাকের এক ব্যক্তি ট্রাকটি চালিয়ে বগুড়ার দিকে রওনা হয়। মাইক্রোবাসটি ট্রাকের পিছনে আসতে থাকে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার বাঘোপাড়া এলাকায় দিনাজপুরগামী ৭০ ব্যারেল সয়াবিন তেল বোঝাই ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট- ২০-৪৪৯৯) একই কায়দায় ছিনতাই করে চালক হিরা মিয়া ও হেলপার রফিকুলকে হাতকড়া পড়িয়ে কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়া হয়।
একই সময়ে মহাসড়ক থেকে একটি যাত্রীবিহীন প্রাইভেট কার থামিয়ে চালক নোয়াব আলীকেও হাতকড়া পড়িয়ে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে উঠানো হয়। ছিনতাইকারীরা সয়াবিন তেল বাহী ট্রাকটি ঘুরিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দেয়। ট্রাকের মালিক জিপিএস ট্রাকিং এর মাধ্যমে ট্রাকটি উল্টো পথে যাওয়া দেখে হাইওয়ে পুলিশকে জানান।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিওনের অতিরিক্ত ডিআইজি শহিদ উল্লাহ জানান, খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ছিনতাই করা ট্রাকটির পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু ছিনতাইকারীর দল বার বার পুলিশের গাড়িকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করে।এভাবে ৪০ কিলোমিটার ধাওয়া করে বগুড়া জেলার শেষ সীমানায় ঘোগা ব্রীজ পার হয়ে ট্রাকটি ফেলে রেখে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে মহাসড়কে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার শেষ সীমানায় ভাবনা ফিলিং স্টেশনের পাশে মঙ্গলবার ভোর রাত ৫ টার দিকে পাঁচজন চালক ও হেলপারকে হাতকড়া ও চোঁখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
আরও পড়ুনবগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ ইকবাল বাহার বলেন,গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ছিনতাইকারীদের সনাক্ত করার কাজ চলছে। খোয়া যাওয়া একটি ট্রাক ও প্রাইভেট কার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র পরিকল্পিতভাবে মহাসড়কের নির্জন অংশ বেছে নেয়। একরাতে পরপর তিনটি ছিনতাইয়ের ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছেএটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সংগঠিত অপরাধ চক্রের সুপরিকল্পিত তৎপরতা।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, সারাদেশে থানা গুলোতে একসাথে সকল ওসি রদবদলের সময়টাকে দুর্বৃত্তরা সুযোগ হিসেবে নেয়। পুলিশের নেতৃত্বে পরিবর্তন এলে মাঠপর্যায়ের তৎপরতা সাময়িকভাবে শিথিল হয় আর সেই সুযোগেই ছিনতাইকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক







