ভিডিও শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

বগুড়ার ধুনটে যমুনার বাঁধে আশ্রিত বাস্তুহারা নারীদের গোবরের ঘুঁটে বেচে আয়

বগুড়ার ধুনটে যমুনার বাঁধে আশ্রিত বাস্তুহারা নারীদের গোবরের ঘুঁটে বেচে আয়

রফিকুল আলম, ধুনট (বগুড়া) থেকে ঃ বড় বৌ, মেজ বৌ, সেজ বৌ মিলে/ঘুঁটে দেয় ঘরের পাঁচিলে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজ পাঠের এই চরণের বাস্তবতা মিলেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর ভাঙন জনপদে। এখনে গরু কিংবা মহিষের গোবর দিয়ে ঘুঁটে তৈরির ধুম পড়েছে।

যমুনা নদীর বাঁধের ঢালে, বাড়ির পাশে, রাস্তার ধারে, সীমানা প্রাচীরে, বেড়ায় এমনকি জমিতেও ঘুঁটে শুকাতে দিচ্ছেন নারীরা। নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে বাঁধে আশ্রিত বাস্তুহারা পরিবারে নিজেদের ঘরে মাটির চুলা জ্বালানোর পাশাপাশি সংসারে বাড়তি আয়ও হচ্ছে। কেউ কেউ ঘুঁটে বেচে করছেন আয়, হচ্ছেন স্বাবলম্বীও।

স্থানীয়রা জানান, গরু ও মহিষের গোবরে তৈরি প্রাকৃতিক জ্বালানি ঘুঁটের কদর দিন দিন বাড়ছে। একসময় নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন রান্নার জন্য গোবর কুড়িয়ে এনে ঘুটে তৈরি করতো। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস, কাঠ ও অন্যান্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে গ্রামের গরু পালনকারী অধিকাংশ পরিবার এটি তৈরি করছে।

গোবর চটকে শুকনা লম্বা কাঠির গায়ে মুষ্টি মুষ্টি করে লাগিয়ে জ্বালানির যে উপকরণ তৈরি হয়, তাকে বলে মুঠে বা মুইঠ্যা। আবার হাতের তালুতে গোবর নিয়ে গাছ, বেড়া কিংবা দেয়ালে লেপ্টে চাকতির মতো করে শুকিয়ে যে জ্বালানি উপকরণ তৈরি হয় তাকে বলে ঘুঁটে-ঘষি বা ঘুইঠ্যা। ঘুঁটে পাঁচ থেকে সাত দিন রোদে শুকানোর পর জ্বালানির উপযোগী হয়। গ্রামীন নারীরা এগুলো মাটির চুলায় সাশ্রয়ী জ্বালানী হিসেবে রান্নান কাজে ব্যবহার করে থাকেন। 

আরও পড়ুন

বাঁধে আশ্রিত অনেক নারীই গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। শুধু আর্থিক সচ্ছলতাই নয়, পরিবারের রোজকার জ্বালানি সঙ্কটও মেটাচ্ছেন তারা। এর সত্যতা মিললো ভান্ডারবাড়ি বাঁধে আশ্রিত জোসনা খাতুনের কথায়। তিনি জানান, আমাগ্যারে (আমাদের) এহানের (এখানের) সগোলেই (সবাই) ঘুঁটে বানায়। আর এ ঘুঁটে কিনতি বাড়িতি ব্যাপারি আসে। বৌ-ঝিরা এই ঘুঁটে বেইচা অনেকের বাচ্চা-কাচ্চার লেহাপড়ার খরচ যোগায়। সমিতির কিস্তি দেয়। একই এলাকার রেহেনা খাতুন জানান, এখন কোনো কাজ নাই। গ্রামের আশেপাশে থেকে গোবর কুড়িয়ে এনে নিজেই মুইঠ্যা-ঘুইঠ্যা তৈরি করি। কয়েকদিন রোদে শুকালে রান্নার উপযোগী হয়। নিজেদের জন্য কিছু রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেই। গৃহবধূ আঙ্গুলীও মরিয়ম বেগম বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই ঘুঁটে দিয়ে সব ধরনের রান্নার কাজ করে আসছি। এটি তৈরি করতে আমাদের খরচ লাগে না। শুকনা মৌসুমে আমরা অতিরিক্ত ঘুঁটে তৈরি করে মজুত রাখি। বর্ষাকালে নিশ্চিন্তে সেগুলো রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। প্রতিবস্তা ঘুঁটে ৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। 

একই এলাকার জাহিদ হাসান সাগর বলেন, গোবরের ঘুঁটে বিক্রি করে এলাকার বেকার মহিলা ও গৃহবধূরা পরিবারের উন্নতি করছে। গোবর দিয়ে একদিকে যেমন জ্বালানির চাহিদা মেটানো যায়, অন্যদিকে মাটিতে পঁচিয়ে জৈবসার তৈরি করে পাওয়া যায় অধিক ফলন। তিনি আরও বলেন, অস্বচ্ছল পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের অনেক স্বচ্ছল পরিবারও রয়েছেন যারা গবাদি পশুপালন করে একদিকে জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছেন, অন্যদিকে ঘুঁটে বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছেন। 

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান, কারণ আমাদের সমুদ্র আছে : প্রধান উপদেষ্টা

দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত

বগুড়ার ধুনটে ইউপি সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ

বড় ধরণের বোমা হামলা নৎসাত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী   

লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে জাতিসংঘ মহাসচিব

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে লিচুবাগানে কুমড়া চাষ করে সফল স্কুলশিক্ষক জনি