ভিডিও শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

জুলাই-আগস্টের হত্যাকান্ড

জুলাই-আগস্টের হত্যাকান্ড

স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি চেয়েছিল দেশের মানুষ। এমন দম আটকানো পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল যে, নিজের নি:শ্বাসের শব্দেও চমকে উঠতো তারা। ভীতিকর সেসব দিনের কথা ভাবলে এখনও গা শিউরে ওঠে। দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে বসেছিল স্বৈরশাসন। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না, এমন সময় সে স্বৈরশাসন উৎখাতে এগিয়ে এসেছিল শিক্ষার্থীরা। নতুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধিরা যখন বুকের রক্ত দিচ্ছে, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সর্বস্তরের দেশবাসী।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই দিনগুলোয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যানুসন্ধানে এসেছিল জাতিসংঘের একটি দল। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে তথ্যানুসন্ধান কমিটি। ওই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল।

চব্বিশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকালে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে যে গণহত্যা চালানো হয়, তা খোদ শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশেই হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে জুলাই গণহত্যার মূল হোতা হিসেবে দায়ী করা হয়েছে।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্য অনুসন্ধান রিপোর্ট জেনেভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুকু এ রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। পরে এ নিয়ে সেখানে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বস্তুত জাতিসংঘের এ রিপোর্টের মধ্য দিয়ে ওই গণহত্যার তথ্য বিশ্বের কাছে উন্মোচিত হলো। নতুন মাত্রা পেল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত নির্বিাচার হত্যাকান্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের প্রশ্নটি। এ ছাড়া এ প্রতিবেদনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দলিল হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে ৫টি খাতে সংস্কারের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, এসব খাতে সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে ও ব্যাপক পরিসরে।

আরও পড়ুন

এই পাঁচটি খাত হচ্ছে-জবাবদিহি ও বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী, নাগরিক পরিসর, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সুশাসন। সংস্থাটি বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবকিছুর আগে এই ৫টি খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন ও এ ধরনের অপরাধের তদন্ত ও বিচারের জন্য স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, কার্যকর ও সমন্বিত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি এসব অপরাধ যাদের নির্দেশে হয়েছে তাদের বিচার নিশ্চিত করা, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, পুলিশ প্রবিধান সম্পূর্ণ সংশোধন, বিতর্কিত ফৌজদারি আইন রদ অথবা সংশোধন করে এসব আইনে গ্রেফতার, তদন্ত ও বিচার স্থগিত; এসব আইনের মধ্যে রয়েছে- সাইবার নিরাপত্তা আইন, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইন, মানহানি মামলা; বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার, তল্লাশি ও নজরদারির ক্ষমতা হ্রাস করা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শ্রমিক নেতা, নাগরিক অধিকার কর্মীসহ মানবাধিকার কর্মীদের ওপর বেআইনি নজরদারি বন্ধে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে অবিলম্বে নির্দেশ দেওয়া, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া, দুর্নীতি দমন আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা, দুর্নীতিতে জড়িতদের বিচার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্যদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা-এসব সুপারিশ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।

জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক বলেছেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা। তারা বিশ্বাস করেন, সাবেক সরকারের কর্মকর্তারা, আইন শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা

নিয়মতান্ত্রিক ও সংঘবদ্ধভাবে গুরুতর মানবাধিকার লংঘন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অধিবেশনে বলেছেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোকে সরকার সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করবে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা শুধু এ প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমেই শেষ হয়ে যাবে না। আমরা মনে করি, প্রহসন ও প্রতারণা রাজনীতির ইতিহাসে এ এক বিরল ঘটনা। জাতি হিসেবে এ কলঙ্ক থেকে পরিত্রাণের জন্য এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিশুটির দাফন সম্পন্ন, ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়িতে জনতার আগুন

শুক্রবার একই ফ্লাইটে কক্সবাজার যাচ্ছেন ড. ইউনূস ও গুতেরেস

ধর্ষণ-নিপীড়নের বিচার দাবিতে ঢাবিতে মশাল মিছিল

বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বেড়ে ফের রেকর্ড সর্বোচ্চ

ঢাবির সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক আর নেই

বগুড়ার কাহালুতে একই রাতে আটটি দোকানের ১২ লাখ টাকার মালামাল লুট