খালেদা জিয়াকে ভোলেননি জন্মভিটা জলপাইগুড়ির মানুষ

খালেদা জিয়াকে ভোলেননি জন্মভিটা জলপাইগুড়ির মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি পৌরসভা ভবনের কাছেই নয়াবস্তিতে শৈশবের বেশ কয়েকটা বছর কেটেছিল খালেদার। দেশভাগের পর তার পরিবার বাংলাদেশে চলে এসেছিল।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জন্মেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি শহরে নয়াবস্তি পাড়ায়। সেখানেই শৈশবের বেশ কয়েকটা বছর কেটেছিল তার। খালেদার চিরবিদায়ে তাই শোক জলপাইগুড়িতে।

খালেদার প্রতিবেশী ছিলেন জলপাইগুড়ির ভোলা মণ্ডল। যার বাড়ির উল্টোদিকে জমিতেই ১৯৪৫ সালে জন্ম হয়েছিল খালেদার। ভোলা মন্ডলের মায়ের কোলেই তার বেড়ে ওঠা। মঙ্গলবার খালেদার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর সেইসব স্মৃতিকথাই দিল্লি-ভিত্তিক এএনআই বার্তা সংস্থায় বর্ণনা করেছেন শোকার্ত ভোলা মন্ডল।

ভোলা মণ্ডল বর্তমানে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব। এএনআই-কে তিনি বলেন, “আমাদের খুব দুঃখ লাগছে। সকালবেলা আমি শুনলাম খালেদা জিয়া আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মানুষের মৃত্যুই আমাদের কাছে খুব দুঃখজনক। সেই হিসাবে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি।”


ভোলা জানান, তার মায়ের কোলে পিঠে বড় হয়েছেন খালেদা। দেশ ভাগের পর খালেদার পরিবার অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পরিবারের সঙ্গে সম্পত্তি বিনিময় করে বাংলাদেশে চলে যায়। তখন থেকে বাড়িটিতে চক্রবর্তী পরিবারই থাকে। তবে বাংলাদেশে চলে গেলেও ভিটে দেখতে খালেদার আত্মীয়-স্বজনদের এখনও নিয়মিত জলপাইগুড়িতে যাতায়াত রয়েছে।

প্রবীণদের কথা থেকে জানা যায়, জলপাইগুড়িতেই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা। দিনাজপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি সদর গার্লস স্কুল ও পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।

ছোটবেলার আদরের নাম ছিল ‘পুতুল’। জলপাইগুড়ি শহরে ব্যাঙ্কিং এবং শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ‘দাশ অ্যান্ড কোম্পানি’তে কাজ করতেন খালেদা জিয়ার বাবা মহম্মদ ইসকান্দর। দেশভাগের সময় সপরিবারে বাংলাদেশের দিনাজপুর শহরে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।


খালেদা জিয়া পরবর্তীতে দিনাজপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। তার মৃত্যুতে পুরনো সব স্কুলের বর্তমান কর্তৃপক্ষেও শোকস্তব্ধ।

দীর্ঘ রোগভোগের পর মঙ্গলবার সকালে মারা যান বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রথম এই নারী প্রধানমন্ত্রী ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদার বিয়ে হয়েছিল। এরপর ‘খালেদা খানম পুতুল’ নাম বদলে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন ‘খালেদা জিয়া’ হিসেবে।

১৯৭৭ সালে স্বামী জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে জনসমক্ষে আসেন অন্তর্মুখী স্বভাবের এই নারী।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান সেনাসদস্যদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপি-র সাধারণ সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন।

জলপাইগুড়ির নয়াবস্তির সেই পুরনো বাড়ির একাংশে এখন গোপ পরিবার এবং অন্য অংশে চক্রবর্তী পরিবার বসবাস করছে। স্থানীয়রা জানান, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এই এলাকার অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখেছিলেন।

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/152259