মানিক মিয়া রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে,জানাজায় অংশ নিতে মানুষের ঢল

মানিক মিয়া রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে,জানাজায় অংশ নিতে মানুষের ঢল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা ছুটে আসছেন প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে। মানুষের চোখেমুখে স্পষ্ট একজন আপসহীন দেশনেত্রীকে হারানোর গভীর বেদনা।

আজ (বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ৯টার পর সরেজমিনে দেখা যায়, জানাজার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আগেই হাজার হাজার মানুষ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অবস্থান নিয়েছেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। চারদিক থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল ও স্রোতের মতো মানুষ জানাজাস্থলের দিকে এগিয়ে আসছেন।

নরসিংদী থেকে আসা আমির হোসেন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘বাড়িতে থাকতে পারিনি। নিজের টাকা খরচ করে প্রিয় নেত্রীর জানাজায় শরিক হতে ছুটে এসেছি।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ফারুক আহমেদ ও শ্যামল কুমার সাংবাদিককে বলেন, ‘এমন দেশপ্রেমিক ও সাহসী নেত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসে আবার আসবে কি না, জানি না। প্রিয় নেত্রীর শেষ বিদায় জানাতে এসেছি।’

দক্ষিণ প্লাজা খুলে দেয়া হয়েছে, দুই মাঠ উন্মুক্ত

মানুষের ঢল সামাল দিতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার প্রবেশপথ খুলে দেয়া হয়েছে। বুধবার সকাল সোয়া ১০টার পর জিয়া উদ্যানসংলগ্ন এ গেট খুলে দিলে লাখো মানুষ দক্ষিণ প্লাজা এলাকায় প্রবেশ করেন। দক্ষিণ প্লাজার দুটি বড় মাঠ জানাজার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

আজ দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে গতকাল (মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর) রাতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।


নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, মোতায়েন ২৭ প্লাটুন বিজিবি

জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম সাংবাদিককে জানান, এভারকেয়ার হাসপাতাল, জাতীয় সংসদ ভবন ও জিয়া উদ্যান এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ ১০ হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে।

বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতি

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভুটান ও মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সরকারের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও বিশেষ দূতরা ঢাকায় এসেছেন। 

মরদেহ আনার নির্ধারিত রুট ও যান চলাচল নির্দেশনা

ডিএমপি জানিয়েছে, এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে–কুড়িল ফ্লাইওভার–গুলশান-২ হয়ে ফিরোজা বাসভবনে নেয়া হবে। সেখান থেকে বিজয় সরণি হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আনা হবে।

নিরাপত্তার স্বার্থে ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আসাদগেট, উড়োজাহাজ ক্রসিংসহ একাধিক এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহনের জন্য নির্ধারিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। 

ট্রেন-বাসে ঢাকায় মানুষের ঢল

বগুড়া, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক, বাস ও ট্রেনে করে মানুষ ঢাকায় আসছেন। অনেকে মঙ্গলবার রাতেই রওনা হয়েছেন। কেউ কেউ ভোর ৪টার মধ্যেই জানাজাস্থলে পৌঁছান। অনেকের হাতে কালো ব্যাজ ও চোখে অশ্রু। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য নাদিম হাসান মিঠু বলেন, ‘গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রীকে হারিয়ে সারাদেশ শোকাহত। তার জানাজায় শরিক হওয়াটা আমাদের দায়িত্ব।’

গাজীপুর থেকে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাকিব বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে সক্রিয় নই, কিন্তু খালেদা জিয়া গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন। তার জানাজায় উপস্থিত থাকা আমার নৈতিক দায়িত্ব।’

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। দাফনকাজে পরিবার, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি ও বিএনপির মনোনীত প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

জীবনের শেষ অধ্যায়

প্রায় ৮০ বছর বয়সী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে তিনি ইন্তেকাল করেন। আজ তার জানাজায় অংশ নিতে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ইতিহাসের এক শোকাবহ জনসমাবেশের সাক্ষী হচ্ছে বাংলাদেশ।

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/152181