১ ডলার=১৪২০০০০ রিয়াল, ক্ষোভে উত্তাল ইরান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মুদ্রার রেকর্ড দরপতন এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল ইরানের রাজধানী তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানি রিয়ালের মান স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও দোকানিরা সোমবার দোকানপাট বন্ধ রেখে রাজপথে নেমে আসেন।
বিগত কয়েক দিন ধরেই ইরানি রিয়ালের দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। বর্তমানে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজার রিয়ালে।
মুদ্রার এই নজিরবিহীন অবমূল্যায়নের ফলে দেশটিতে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে তেহরানের সা’দি স্ট্রিট এবং ঐতিহ্যবাহী গ্র্যান্ড বাজারের নিকটবর্তী শুশ এলাকায় শত শত মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অনেক ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন এবং অন্যদেরও এই প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে বিক্ষোভকারীদের সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা গেছে।
সরকারি পরিসংখ্যানেও ইরানের অর্থনৈতিক সংকটের স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ডিসেম্বরে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। যেখানে খাদ্যপণ্যের দামই বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান বর্তমানে অতি-মুদ্রাস্ফীতির দ্বারপ্রান্তে। নতুন করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং আগামী বছর থেকে কর বৃদ্ধির সরকারি পরিকল্পনা জনমনে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইরানের এই চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মূলে রয়েছে দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির সময় প্রতি ডলারের মান ছিল মাত্র ৩২ হাজার রিয়াল।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে আসার পর ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এছাড়া গত জুন মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সরাসরি যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পুনরায় পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির অর্থনীতি গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। বর্তমানে তেহরানের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
সূত্র: এএফপি
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/151982