দেশের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান নেমেছে ৮ থেকে ৩ ডিগ্রিতে : তীব্র শীত অনুভূত
স্টাফ রিপোর্টার : ক্রমেই কমছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য, এতে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দেশের যে অঞ্চলে পার্থক্য যত কম সেখানে শীতের তীব্রতা তত বেশি। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৩ ডিগ্রি।
ফলে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। কুয়াশা এবং শীতে জুবু-থুবু দিন পার করেছেন অফিস গামি লোকজন, শিক্ষার্থী, রাস্তারপাশের দোকানী, শ্রমজীবী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। আগামি ৫ দিন তাপমাত্রা কমার কোন সম্ভাবনা নেই জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি।
পৌষের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বাড়ছিল শীতের দাপট। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দেশজুড়ে যেন জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। এর সঙ্গে কয়েকদিন ধরে হিমালয় থেকে আসা শীতল বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবন। আগামী জানুয়ারি মাসে শীতের এ প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশের উত্তর জনপদে কুয়াশার দাপট। মাঝে মাঝে কিছু এলাকায় সূর্যের মুখ দেখা যায় বটে, তবে তা কিছু সময়ের জন্য।
এদিকে ঘন কুয়াশার রাস্তাঘাটে যানবাহনগুলো চলছে খুব ধীর গতিতে।দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। নৌ চলাচল বিলম্ব হচ্ছে। বোরো বীজতলা নষ্টের আশংঙ্কা ও আলু আবাদ নিয়ে বেকাদায় পড়েছেন কৃষক। দিনেরাতে বৃষ্টির মত কুয়াশা ও দিনভর সূর্য্যরে মুখ দেখতে না পারার জন্য ছোট ছোট শিশুদের ঘরের মধ্যে আটকে রাখছেন অভিভাবক।
কষ্টে আছেন বয়স্ক মানুষ। সর্দি, ঠান্ডালাগা, অ্যাজমা রোগি, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। বর্হিবিভাগে এমন অবস্থায় বিশেষ সচেতণতা অবলম্বন করতে বলছেন চিকিৎসকরা।
বগুড়ায় গত কয়েকদিন হলো রোদ নেই। বইছে শীতল হাওয়া। সকাল থেকে অনেক দিনমজুর কাজ পাননি দুপুর পর্যন্ত। মোকামতলা থেকে আসা দিনমজুর সুলেমান শেখ জানান, ভাড়া দিয়ে শহরে এসে রিকশা নিয়ে বের হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩শ’ টাকা আয় হয়েছে। এই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য বাজার করবো না রিকশা ভাড়া দিবো ভেবে পাচ্ছি না।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস সুত্র জানায়, গত কয়েকদিন হলো দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি ঘন কুয়াশার কারণে ভূপৃষ্টে সূর্য্যরে আলো পৌছাতে পারছে না। ফলে মাটি উষ্ণ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এ্সব কারনেই হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। সামনে আরও তাপমাত্রা কমতে পারে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন,
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : শেরপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে ঘনকুয়াশা ও সূর্যের দেখা না মেলায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে কৃষকরা। তারা চাষের সময় চারা সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কাও করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় ১২৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো বীজতলা করা হয়েছে কিন্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭৭ হেক্টর জমি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বীজতলার চারাগুলোর রং হলদে আকার ধারন করেছে, বৃদ্ধি থমকে গেছে, কৃষকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বীজতলা রক্ষার জন্য।
কোল্ড ইনজুরি থেকে বাঁচাতে সন্ধ্যায় বীজতলা পানি দিয়ে পূর্ণ করে তা সকালে বের করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে শেরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। এছাড়া সালফার জাতীয় ওষুধ স্প্রে করতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা আক্তার বলেন, কিছু এলাকায় বীজতলার সামান্য ক্ষতি হয়েছে, আমরা বীজতলা রক্ষার জন্য কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। তাছাড়া এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে অতএব চারার কোন সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মোকামতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি: ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে শিবগঞ্জে বোরো ধানের বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন হলো সুর্যের আলো না পাওয়ায় বোরো ধানের বীজতলার বীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের আশঙ্কা বীজতলা নষ্ট হলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বোরো আবাদের উপর। অন্যদিকে কৃষি অফিস থেকে বীজতলা রক্ষায় তা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রচন্ড শীত কুয়াশা আর কায়াশার কারণে কৃষকের বীজতলা রক্ষায় কেউ কেউ পলিথিন দিয়ে তা রক্ষা করেছেন। আবার অনেকেই খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিয়েছে। অনেক বীজতলা প্রচন্ড শীত ও কুয়াশায় হলদে আকার ধারণ করেছে।
যে সব বীজতলা একটু উঁচু এলাকায় বীজতলা সেগুলি ক্ষতি হওয়ার অপেক্ষাকৃত ঝুঁকি কম। এব্যাপারে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান পাপ্পু জানান প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশায় বীজতলা রক্ষায় রাতের বেলায় স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
মাটির নিচ থেকে পানি তুলে বীজতলায় দিতে হবে। পুকুর থেকে তোলা পানি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ পুকুরের পানি অনেক ঠান্ডা। প্রতি ১০ মিটার পানিতে ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম থিওভিট জাতীয় ওষুধ ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/151972