তীব্র শীতে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে
স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা অফিস : ঘনকুয়াশার কারণে আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর সদরঘাট থেকে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার নৌচলাচলের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
এতে বলা হয়, ঘনকুয়াশার কারণে রাতে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলে সকল ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। আর যে সকল লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পথিমধ্যে রয়েছে তাদের ও অন্যান্য নৌযানকে ‘অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল, ১৯৭৬’ মোতাবেক চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পৌষের মাঝামাঝি এসে রাজধানীসহ সারাদেশে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় গত কয়েকদিন থেকে রাজধানীতে শীতের অনুভূতি আরও বেড়েছে। ফলে ঠান্ডায় বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষরা। দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হকার ও নির্মাণ শ্রমিকদের ভোগান্তি অনেকটা বেড়েছে।
আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টায়ও সূর্যের দেখা মেলেনি। পাতলা কম্বল কিংবা সোয়েটারে নিজেকে ঢেকে রাস্তায় নামছেন শ্রমজীবীরা। মৌচাক মোড়ে রিকশাচালক তৌহিদুর রহমান বলেন, জীবিকার তাগিদে ঠান্ডার মধ্যে দিন শুরু করতে হচ্ছে। হঠাৎ ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় শরীরও ঠিকমতো চলে না। কিন্তু কাজ না করলে আবার সংসার চলে না। হাত-পা কেমন যেন বসে থাকে।
ওয়ারলেস রেলগেটে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণশ্রমিক আশরাফুল আমিন বলেন, শীতের সকালে কাজ করা খুব কষ্ট। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কুয়াশার অবস্থান দুপুর পর্যন্ত হওয়ায় তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। আগামী সাপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আপাতত আবহাওয়া এমন অবস্থায় থাকবে।
সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়। দেখা মিলেনি সূর্যের। গত কয়েকদিন ধরেই টানা মৃদু শৈত্যপ্রবাহে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে হাওর অধ্যুষিত এই উপজেলায় তাপমাত্রা নেমে আসে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। নিকলী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম মাছুম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টায় আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এদিন সারাদেশের মধ্যে নিকলীতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রোববারের তুলনায় আগ সোমবার শীতের তীব্রতা সামান্য বাড়তে পারে। জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসজুড়েই শীতের প্রভাব থাকবে এবং শীতের অনুভূতি কমার সম্ভাবনা নেই। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।
শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবন্ত্র।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়): পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শীতার্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় শীতবন্ত্র বরাদ্দ নেই। পৌষ মাসে কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের সর্ব উত্তরের এ তেঁতুলিয়া এখনো শীতার্ত ছিন্নমূল অসহায় মানুষের জন্য সরকারিভাবে কম্বল বরাদ্দ এলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।
অনেকে শীতবস্ত্র না পেয়ে উপজেলা সদরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে এসে ভিড় করছে। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের নিচে একদল ছিন্নমূল মানুষ শীতবস্ত্রের জন্য ভিড় করতে দেখা গেছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আফরোজ শাহীন খসরু জানান, সরকারিভাবে প্রায় ২৫শ’ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা ইতোমধ্যে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে সরাসরি বিলি করেছি। কিন্তু হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শীতার্তদের জন্য যে বরাদ্দ পেয়েছি তা অপ্রতুল। এখন স্থানীয়ভাবে কিছু শীতবস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছি এবং আরও বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে শীত জেঁকে বসেছে। হিমেল হাওয়া, মৃদ্যু শৈত্য প্রবাহ আর কনকনে ঠান্ডা জবুথুবু হয়ে পড়েছে কিশোরগঞ্জের জনপদ। দু’দিন ধরে সূর্য না উঠায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। রাত হতে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মত কুয়াশা পড়েছে। এতে হাড় কাঁপানো শীতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষরা হাট বাজারে শীতের দোকানে ভিড় করছে। শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নীল রতন দেব জানান, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিমা আঞ্জুম সোহানিয়া জানান, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান রয়েছে।
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে প্রচন্ড শীতে ফুটপাতের বাজারে গরম কাপড়ের দোকান এখন নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা। যে কারণে ফুটপাত বাজারসহ গরম কাপড়ের দোকানে এখন উপচে পড়া ভিড় দেখা দিচ্ছে। দেশের উত্তরের জেলায় শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে ফুটপাতের শীতবস্ত্রের বাজারে জমে উঠেছে কেনাবেচা।
কনকনে ঠান্ডায় স্বস্তির খোঁজে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ ভিড় করছেন উপজেলার নিমগাছী, চান্দাইকোনা, ভুইয়াগাঁতী, ধানগড়া বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা অস্থায়ী শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে এখ উপচে পড়া ভিড়।
উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বসা ফজর আলী জানান, শীত শুরু হওয়ার পর থেকেই বেচাকেনা বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে এসে ক্রেতার চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। অধিকাংশ ক্রেতাই দরদাম করে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী পোশাক কিনছেন। শীত যত বাড়ছে, বিক্রিও তত বাড়ছে।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/151883