উত্তরে হিমেল হাওয়ার ঝাপটা: ৯ ডিগ্রিতে নামল পারদ, কাঁপছে জনপদ

উত্তরে হিমেল হাওয়ার ঝাপটা: ৯ ডিগ্রিতে নামল পারদ, কাঁপছে জনপদ

স্টাফ রিপোর্টার : পৌষের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে আসা কনকনে শীতল বাতাস আর ঘন কুয়াশার দাপটে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন এখন লণ্ডভণ্ড। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামি কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমে বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা। পাশাপাশি থাকবে কুয়াশার প্রকোপ। গতকাল বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার (৫ দিন) আবহাওয়ার বিষয়ে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অন্যদিকে আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়সহ উত্তরের সীমান্ত জেলাগুলোতে সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় মহাসড়কগুলোতে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষ। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

শীতের এই তীব্রতায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, ঘন কুয়াশা ও সূর্যের আলো না থাকায় আলুর মড়ক ও বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রান্তিক কৃষকদের।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
রংপুর জেলা প্রতিনিধি: রংপুরে শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশার দাপট বেড়েই চলছে। ঘন কুয়াশার সাথে বইছে হিমেল বাতাস। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুরের জনপদ। এতে চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

তীব্র শীতে বেশি ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চলে আলু ও সবজি ক্ষেতে এই ঘন কুয়াশায় কাজ করা দুস্কর হয়ে পড়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বেলা বাড়লে বিশেষ করে সকাল ১০ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত কোন মতে কাজ সেরে নিচ্ছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় সর্দি, হাচি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত  হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। যার কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছেন। ফলে শিশু ওয়ার্ডে চাপ বেড়েছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান বলেন, আমরা জেলায় শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে রংপুরের সকল উপজেলায় ২০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। 

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়া সারিয়াকান্দিতে গত কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত থাকছে প্রকৃতি। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী আজ সকালে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা শতকরা ৯৬ ভাগ। গত মঙ্গলবার থেকেই জেলায় ঘন কুয়াশা শুরু হয়েছে। দুপুরের আগ পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না।

হেডলাইট জালিয়ে সকল ধরনের যানবাহন ধীর গতিতে চলাচল করছে। একমাত্র জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। রাতে গাছপালা থেকে টিনের চালার উপর টপটপ করে পানি পরছে। সকাল পর্যন্ত ৫০ মিটার দূরের কোনও কিছু চোখে পরছে না।

অতিরিক্ত শীতে কৃষক শ্রমিকরা মাঠে কাজে বের হতে পারছে না। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে যমুনায় নৌযান চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যমুনা এবং বাঙালি নদী বেষ্টিত হওয়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চলের মানুষরা শীতে গরম কাপড়ের অভাবে পড়েছেন । তবে এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে উপজেলার হাসপাতালে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: পৌষের ১০ দিন যেতে না যেতেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় লালমনিরহাটের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। টানা তিন দিন সূর্যের দেখা নেই। রাতে কুয়াশা ঝরছে বৃষ্টির মতো। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানিয়েছেন।

উত্তরের হিমেল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়ছে লালমনিরহাটের গ্রাম থেকে শহর সবখানে। কুয়াশার কারণে  রাতে গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে। দিনের বেলাতেও  হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।  এর মধ্যে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা তিস্তা নদীর চরে খোলা প্রান্তর, নদীর হাওয়া আর কুয়াশার ভেজা ঠান্ডা একসঙ্গে মানুষের শরীর আর মন দুটোই কাঁপিয়ে দিচ্ছে। শীতের সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে কাজের সুযোগ। দিনমজুরদের অনেকেই সকালে কাজের আশায় বের হয়েও ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে।

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/151629