ভালুকায় ঘটনায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়নি: র‌্যাব

ভালুকায় ঘটনায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়নি: র‌্যাব

ময়মনসিংহের ভালুকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজন পোশাক শ্রমিককে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে দলবদ্ধ হয়ে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় 'ধর্ম অবমাননার' কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ময়মনসিংহ র‍্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মো. সামসুজ্জামান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, নিহত ব্যক্তি যদি ফেসবুকে কিছু লিখতেন তাহলেও একটা বিষয় হতো। সেখানে সবাই এখন বলছেন তারা তাকে (নিহত শ্রমিক) এমন কিছু বলতে নিজেরা শোনেননি। কেউ নিজে শুনেছেন বা দেখেছেন (ধর্ম অবমাননার বিষয়ে) এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি যখন টালমাটাল হয়ে ওঠে তখন ফ্যাক্টরি রক্ষায় তাকে বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ডুবুলিয়া পাইওনিয়ার নিট ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন জেলার তারাকান্দা থানার দিপু চন্দ্র দাস। তাকে বৃহস্পতিবার রাতে জোর করে তার ফ্যাক্টরি থেকে বের করে এনে হত্যা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা উত্তেজিত জনতা ভিকটিমের বিরুদ্ধে নবী ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে রাত আনুমানিক নয়টায় ফ্যাক্টরি থেকে জোরপূর্বক বের করে দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাতসহ কিলঘুষি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মৃতদেহ জামিরদিয়া স্কয়ার মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের মাঝখানে আইল্যান্ডের গাছের সাথে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

র‍্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মো. সামসুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে গেলে ফ্যাক্টরি রক্ষার জন্য সেখানকার কর্মকর্তারা ভিকটিমকে কথিত জনতার হাতে তুলে দিয়েছে। এমনকি বিকেল পাঁচটার ঘটনা রাত আটটায় পুলিশকে বলা হয়েছে। কিন্তু যাদেরই জিজ্ঞাসা করছি তারা বলছেন তারা ওই ব্যক্তি (দিপু চন্দ্র দাস) কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছে শুনেছেন, কিন্তু নিজেরা সরাসরি শুনেননি বা দেখেননি।

র‍্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ফ্যাক্টরির ভেতরেই কিছু শ্রমিক দলবদ্ধ হয়ে দিপু চন্দ্র দাসকে মারধর শুরু করেন। এ সময় তারা তার বিরুদ্ধে নবীকে কটূক্তি করার অভিযোগ করতে থাকেন। তখন মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে যে দিপু চন্দ্র দাস চায়ের দোকানে বসে এমন মন্তব্য করেছেন।

এক পর্যায়ে বাইরে খবর ছড়িয়ে পড়লে ফ্যাক্টরির বাইরেও অনেকে জমায়েত হয়ে দিপুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। তখন সেখানে কারখানাগুলোর ছুটির সময় হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে বহু মানুষ জড়ো হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ফ্যাক্টরির প্রডাকশন ম্যানেজার দিপু চন্দ্র দাসকে তখনই বরখাস্ত করেন।

র‍্যাবের মো. সামসুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, পরিস্থিতি যখন টালমাটাল হয়ে ওঠে তখন ফ্যাক্টরি রক্ষার জন্য ভিকটিমকে বাইরের দিকে ঠেলে দেয় ফ্যাক্টরির লোকজন। যদিও কেউ কেউ জানান- যখন ভেতরে মারধর করা হচ্ছিল, তারই এক পর্যায়ে একটি পকেট গেট দিয়ে বাইরে থেকে লোকজন ভেতরে প্রবেশ করে তাকে বাইরে নিয়ে যায়। বাইরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়ে মারধর করে গাছে ঝুলিয়ে তারপর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে আগুনে রশি ছিঁড়ে দিপু দাসের দেহ পড়ে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই কার্তিক চন্দ্র দাস বলেন, ঘটনায় কারা জড়িত তা ভিডিওতে আছে। এলাকার মানুষ জানে আমার ভাই কেমন। তাকে মিথ্যা অভিযোগ করে খুন করা হয়েছে। তবে যেই কারখানা ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ঘটনার যে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তাতেও এসব দৃশ্য দেখা গেছে। যদিও পরে আবার সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ অভিযোগ করেন যে দিপু আক্রান্ত হয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন।

এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভালুকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলছেন, ঘটনাটি ঘটেছে ফ্যাক্টরিতে এবং পুলিশকে খবরই দেওয়া হয়েছে অনেক দেরি করে।

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/150870