এমপিও শিক্ষকরা যেসব পেশায় যুক্ত হতে পারবেন না
১১টি পেশায় যুক্ত হতে পারবেন না বেসরকারি স্কুল ও কলেজে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। গত রোববার এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলার সব স্কুল-কলেজে পাঠানো হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে পাঠানো নির্দেশনার আলোকে নোটিশ আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বর্তমান বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২৫ অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একটি সম্মানজনক ও পূর্ণকালীন রাষ্ট্রীয় আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত পেশায় নিয়োজিত। তাই তাদের পেশাগত দায়িত্ব ও সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোনো অতিরিক্ত লাভজনক পেশায় সম্পৃক্ত হওয়া নীতিগতভাবে নিষিদ্ধ।’ নিষিদ্ধ ও সীমাবদ্ধ পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাংবাদিকতা, আইন পেশা, কোচিং সেন্টার পরিচালনা বা সেখানে শিক্ষকতা, প্রাইভেট বা কেজি স্কুল পরিচালনা, শিক্ষাবিষয়ক প্রকাশনা বা পাবলিকেশন্সের ব্যবসা, হজ এজেন্ট বা এর বিপণন কার্যক্রম, বিয়ের কাজী বা ঘটকালী পেশা, টং দোকান বা ক্ষুদ্র ব্যবসা, ঠিকাদারি বা নির্মাণ ব্যবসা, মসজিদের পূর্ণকালীন ইমামতি বা খতিবের দায়িত্ব পালন (যা শিক্ষকতার সময়কে প্রভাবিত করে) এবং কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিশেষ সহকারী বা চাটুকার হিসেবে নিয়োজিত থাকা।
তবে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো শিক্ষক স্বেচ্ছাশ্রমে ধর্মীয় বা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতে পারবেন, তবে তা অবশ্যই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে হতে হবে, যাতে মূল পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতা, ওকালতি কিংবা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছিলেন। এতদিন এ বিষয়ে আলাদা কোনো আইনি বাধা না থাকায় মফস্বল এলাকায় বেশিরভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষকই আয়–বর্ধক এসব পেশায় যুক্ত ছিলেন। তবে নতুন এমপিও নীতিমালায় এ ধরনের আর্থিক লাভজনক পেশায় সম্পৃক্ততার ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়েছে।
চলতি মাসের ৭ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নতুন এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। নীতিমালার ১১ নম্বর ধারার ১৭ উপধারার ‘ক’ ও ‘খ’ বিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একাধিক চাকরি বা অন্য কোনো আর্থিক লাভজনক পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।
১১.১৭ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারী একাধিক পদের চাকরি বা অন্য কোনো আর্থিক লাভজনক পেশায় যুক্ত থাকতে পারবেন না। তদন্তে এটি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এমপিও বাতিলসহ বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার।
১১.১৭ (খ) ধারায় ‘আর্থিক লাভজনক পেশা’ বলতে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা, বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিকতা এবং আইন পেশায় কর্মের বিনিময়ে প্রাপ্ত বেতন, ভাতা বা সম্মানী বোঝানো হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে সাংবাদিকতাকে আলাদা করে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। সরকারি চাকরিজীবীর মতোই এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরাও সরকারি অর্থ পান। তাদের বেতন, বাড়িভাড়া ভাতা, ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন সুবিধা সরকার দেয়। সেজন্যই আর্থিক লাভজনক পেশায় জড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞারোপ করা হয়েছে। কেউ নীতিমালা লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/150359