বগুড়ার নন্দীগ্রামে আমন ধান সিদ্ধ ও শুকাতে ব্যস্ত গ্রামীণ নারীরা
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : অগ্রহায়ণ মাস এলেই গ্রামবাংলায় শুরু হয় আমন ধান কাটা ও মাড়াই। এরপর শুরু হয় সারা বছরের চাল প্রস্তুতের কর্মযজ্ঞ। মাঠের কাজ শেষে এখন গ্রামীণ নারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন আমন ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকানোর কাজে। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত উঠান কিংবা খোলা জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সিদ্ধ ধান, যাতে ভালোভাবে শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার গ্রামগুলো এখন কর্মচাঞ্চল্যে ভরে ওঠেছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই নারীরা কাজে নেমে পড়েন। কেউ ধান ভিজিয়ে রাখছেন, কেউ বড় হাঁড়িতে ধান সিদ্ধ করছেন, আবার কেউ ঝুড়ি বা ডালায় করে সিদ্ধ ধান এনে উঠানে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ঝাড়ু দিয়ে ধান সমান করা, রোদের তীব্রতা অনুযায়ী ধান উল্টে দেওয়া প্রতিটি ধাপে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে অর্জিত অভিজ্ঞতা।
উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন গ্রামে একই ধরনের চিত্র চোখে পড়ে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান সিদ্ধ ও শুকানো হলে চালের মান ও পুষ্টিগুণ ভাল থাকে। এ কারণেই যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা মাঠের কাজ শেষ করলেও ঘরের ভেতরের এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করেন নারীরাই।
নন্দীগ্রাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজম বলেন, যদিও আধুনিক রাইস মিল ও বাজারজাত চালের ব্যবহার বাড়ছে, তারপরও গ্রাম বাংলায় সিদ্ধ ধান শুকানোর এই প্রথা এখনো টিকে আছে। কারণ এতে খরচ কম, মান ভালো এবং পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী চাল সংরক্ষণ করা যায়। নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম কামাল বলেন, গ্রামীণ নারীদের এই শ্রম আমাদের ঐতিহ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তারা নিজেদের শ্রমে সারা বছরের খাবার নিশ্চিত করছেন। আমরা চাই, নারীরা যেন আরও নিরাপদ ও সুবিধাজনক পরিবেশে এই কাজ করতে পারেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, আমন ধান সিদ্ধ ও শুকানো একটি বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর পদ্ধতি।
এতে চালের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। গ্রামীণ নারীদের অভিজ্ঞতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমেই এই পদ্ধতি টিকে আছে। তিনি আরও বলেন,এই প্রক্রিয়া শুধু একটি ঘরোয়া কাজ নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/150059