সন্দেহভাজন ফয়সালের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ 

সন্দেহভাজন ফয়সালের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ 

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ও তার আইটি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
 
সূত্র জানিয়েছে, মাসুদের ব্যক্তিগত ও কোম্পানি অ্যাপল সফট আইট লিমিটেড এবং তার পরিবারের সব সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্য।
 
প্রসঙ্গত, রাজধানীর বিজয়নগরে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রকাশ্যে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদকে শনাক্ত করেছে পুলিশ, যার গুলি করার সিসিটিভির ফুটেজ এবং হাদির প্রচারণায় ছদ্মবেশে অংশ নেয়ার ছবি নিয়ে নানা মাধ্যমে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফয়সাল করিম নামের এই ব্যক্তি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। পেশাদারদের যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। এই অ্যাকাউন্টটি যে ফয়সালেরই তা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নিশ্চিত করেছেন। লিংকডইনে ফয়সাল নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
 
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। পরে তাকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম।
 
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তার বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এলো। এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি এত অল্প সময়ের (৩ মাস ৮ দিন) মধ্যে কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। এ নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা–সমালোচনা চলছে। এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ওই সন্দেহভাজনের ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
 
এদিকে, ওসমান হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। পরে তাকে পল্টন থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। র‌্যাব জানায়, মোটরসাইকেলটির নম্বর ৫৪-৬৩৭৫। গ্রেফতারকৃত হান্নানের বাবার নাম মো. আবুল কাশেম। তার বাড়ি রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ। 
 
হত্যার ঘটনায় হান্নান জড়িত কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/150008