শীতে রুম হিটার আরাম যেন মরণফাঁদ না হয়

শীতে রুম হিটার আরাম যেন মরণফাঁদ না হয়

আইটি ডেস্ক : শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরজীবনে রুম হিটারের ব্যবহার এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় উষ্ণতার পরশ পেতে অনেকেই সারারাত হিটার চালিয়ে রাখেন। কিন্তু প্রযুক্তির এই আশীর্বাদটি সামান্য অসতর্কতায় রূপ নিতে পারে ভয়াবহ অভিশাপে। অগ্নিকাণ্ড, শ্বাসকষ্ট কিংবা কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার মতো দুর্ঘটনা এড়াতে হিটার ব্যবহারের সঠিক নিয়মাবলি জানা এবং মানা একান্ত জরুরি।


শীতকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট এবং হিটার ব্যবহারের অসতর্কতা এর অন্যতম প্রধান কারণ। রুম হিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কারিগরি এবং স্বাস্থ্যগত দিকগুলো সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

নিরাপদ দূরত্ব ও অবস্থান : রুম হিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর সময় বিছানার একদম কাছে হিটার রাখা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবহারকারী এবং হিটারের মধ্যে অন্তত তিন থেকে পাঁচ ফুট দূরত্ব থাকা উচিত। এছাড়া হিটারের খুব কাছে পর্দা, বিছানার চাদর, কম্বল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ থাকলে তা থেকে সহজেই আগুন ধরে যেতে পারে। বিশেষ করে ফ্যান হিটার বা কয়েল হিটারগুলো দ্রুত উচ্চ তাপ উৎপন্ন করে, যা নিকটস্থ বস্তুকে উত্তপ্ত করে তোলে।

বৈদ্যুতিক সংযোগে সতর্কতা :  রুম হিটার সাধারণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ বা উচ্চ ওয়াটেজ ব্যবহার করে। তাই সাধারণ মাল্টিপ্লাগ বা এক্সটেনশন কর্ডে হিটার চালানো উচিত নয়। এতে অতিরিক্ত লোড পড়ে তার গলে যেতে পারে এবং ‘শর্ট সার্কিট’ হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। হিটার সর্বদা দেয়ালের শক্তিশালী সকেটে সরাসরি সংযোগ দেওয়া উচিত এবং ব্যবহারের আগে প্লাগ বা সকেট ঢিলা আছে কি না, তা পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ভেন্টিলেশন :  বদ্ধ ঘরে দীর্ঘসময় হিটার চালিয়ে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে গ্যাস বা কেরোসিন হিটার ব্যবহারের সময় কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা নিঃশব্দ ঘাতক হিসেবে পরিচিত। ইলেকট্রিক হিটারও ঘরের বাতাসকে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলে, যা শ্বাসকষ্ট, নাক-গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই হিটার চালানোর সময় ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য জানালা সামান্য খোলা রাখা বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। বাতাসের আর্দ্রতা বা হিউমিডিটি বজায় রাখতে ঘরে এক পাত্র পানি রাখা অথবা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা একটি কার্যকরী সমাধান।

রক্ষণাবেক্ষণ ও জরুরি অবস্থা : দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার পর শীতে হিটার বের করেই সুইচ অন করা উচিত নয়। ভেতরে জমে থাকা ধুলোবালি মোটরের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কয়েল অতিরিক্ত গরম করে ফেলে। তাই নিয়মিত ‘সার্ভিসিং’ ও পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এছাড়া বাড়িতে শিশু বা পোষা প্রাণী থাকলে হিটারটি তাদের নাগালের বাইরে এবং সমতল স্থানে রাখতে হবে, যাতে ধাক্কা লেগে উল্টে না যায়। আর যদি দুর্ঘটনাবশত আগুন লেগেই যায়, তবে ভুলেও পানি ঢালা যাবে না; এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রথমে মেইন সুইচ বন্ধ করে ভারী কম্বল দিয়ে আগুন চাপা দেওয়া বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত।


প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরামদায়ক করেছে, কিন্তু সেই আরাম যেন জীবননাশের কারণ না হয়, সে দায়িত্ব ব্যবহারকারীর। রাতে ঘুমানোর আগে হিটার বন্ধ করা বা ‘অটো শাটডাউন’ ফিচারযুক্ত আধুনিক হিটার ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, কেবল একটি যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, বরং আমাদের সামান্য অসচেতনতাই বড় কোনো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই এই শীতে উষ্ণতা উপভোগের পাশাপাশি সতর্কতাই হোক আমাদের কাম্য।

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/149114