ভূমিকম্পের জন্য মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ রাজশাহী অঞ্চল

ভূমিকম্পের জন্য মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ রাজশাহী অঞ্চল

মাইনুল হাসান জনি, রাজশাহী : ভূমিকম্পের মাঝারি ঝুঁকিতে রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ এলাকা। ঐতিহাসিক ভূমিকম্পের পরম্পরা বিশ্লেষণ এবং দিন দিন এ অঞ্চলে ভূমিকম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা করছেন গবেষকরা। 

গবেষণার তথ্য মতে, রাজশাহীর অঞ্চলের বেশিরভাগ বসতবাড়ি কাঁচা। আর নগরীর ৫৩ ভাগ ভবন দুর্বল ও অনিরাপদ। ফলে মাঝারি মানের ভূমিকম্পও এ অঞ্চলে হতে ক্ষতির অন্যতম কারণ। কেন্দ্রস্থল থেকে অনেক দূরে হলেও গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থাপনা আর অবকাঠামো। বড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের ভবন হেলে পড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি, গত শুক্রবার ভূমিকম্পে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হল ভবন হেলে পড়াসহ হলের দেয়াল, করিডর, সিঁড়ি বিভিন্নস্থানে নতুন করে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে তারা আতঙ্কিত। ভূমিকম্পের জন্য মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ রাজশাহী অঞ্চল। এ বিভাগের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশ বিশেষ মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজশাহীর ঝুঁকি নিয়ে ২০২২ সালে গবেষণা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে ঐ গবেষণা আর্ন্তজাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষণার তথ্য মতে, ১৯৫০ সালের পরে রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট থেকে ৫শ’ কিলোমিটারের মধ্যে ১হাজার ৫১টি, ১শ’ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্প হয়েছে ৫টি। শেষ ১০ বছরে হয়েছে প্রায় অর্ধেক।
এসব ভূমিকম্পের পরম্পরা বিশ্লেষণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপক ড. আব্দুল্যাহ আল মারুফ জানান, প্রায় ৪শ’ বছর আগে আমাদের এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এরপর ছোট ও মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে। টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বহু বছর ধরে বিপুল শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। এ শক্তির কারণে আগামীতে উত্তরাঞ্চলে শঙ্কা বাড়ছে।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগে মোট বসতবাড়ি ৫১ লাখ ২৮ হাজার। গ্রামে ৪১ লাখ ৭ হাজার এবং শহরে ১০ লাখ ২০ হাজার। গবেষণার তথ্য বলছে, মোট বসতবাড়ির মধ্যে মাটির কাঁচা বাড়ি শকতরা ৫৬ভাগ। রাজশাহী নগরীতে ৫৩ ভাগ ভবন নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ করায় ভূমিকম্প সহনশীল নয়। ৩৪ ভাগ বাড়ি পুরোনো হওয়ায় অনিরাপদ। নগরীর সড়কগুলোর ৩১ ভাগ সরু হওয়ায় বড় ধরণের দুর্যোগ হলে জরুরি উদ্ধার 
কাজ হবে কষ্টসাধ্য।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্যাহ আল মারুফ জানান, এঅঞ্চলে মাটির তৈরি কাঁচা বাড়ির আধিক্য রয়েছে। এখানে ৫ বা ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে বড়ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
তবে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান এসএম তুহিনুর রহমান বলেন, ঝুঁকি কমাতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। বহুতল ভবনে ফায়ার এক্সিট আছে কি না তা যাচাই শুরু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকেও চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ১০ তলার ওপর যে কোনো ভবনের জন্য গণপূর্ত অধিদফতর অনুমোদিত সয়েল টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত সদস্য ছাড়াও জেলার ভলেনটিয়ারদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। তাদের অগ্নিনির্বাপক বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। বড় ধরনের কোনো দূর্যোগ হলে, ভলেনটিয়াররা যেন সহায়তা করতে পারে।

 

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/148067