পড়াশোনার পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্টের গুরুত্ব

পড়াশোনার পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্টের গুরুত্ব

এখনকার দুনিয়া যেন এমন এক পথ যেখানে হাঁটতে হলে শুধু মানচিত্র থাকলেই হয় না, সেই সাথে দরকার হাঁটার শক্তি, পথের ঢাল, আকাঁ বাঁকা পথ সামলে চলার ক্ষমতা, আর প্রয়োজন মতো নতুন পথ তৈরি করার সাহস। পড়াশোনা আমাদের সেই মানচিত্র দেয় কিন্তু স্কিল আমাদের হাতে দেয় সেই শক্তিটা। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্ট বাধ্যতামূলক বিষয় নয়, বরং বেঁচে থাকার স্বাভাবিক নিয়মের মতো হয়ে গেছে।

আজকের যুব সমাজকে ঘিরে যে প্রতিযোগিতাময় পৃথিবী, সেখানে শুধু ডিগ্রি থাকলেই কেউ এগিয়ে যেতে পারে না। গত দশকে যত দ্রুত প্রযুক্তির বিকাশ হয়েছে ততো দ্রুত চাকরি বাজারের চাহিদারও পরিবর্তন এসেছে। যেসব কাজ একসময় অভিজ্ঞতা ছাড়া করা যেত, এখন তা বিভিন্ন সফটওয়্যার, ডিজিটাল প্লাটফর্ম আর যোগাযোগ দক্ষতা দিয়ে পরিচালনা করতে হয়। একজন শিক্ষার্থী যদি শুধু বই মুখস্থ করে ভালো নম্বর পেতে চায়, তাহলে সে একটা সীমানা পর্যন্ত যেতে পারে, কিন্তু তার পরের সীমানা পার হতে হলে বাস্তব দক্ষতা দরকার,যা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে, সক্ষম করে, আর অন্যরকম করে তোলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ৬৫% নিয়োগদাতা কর্মী বাছাইয়ের সময় একাডেমিক ফলাফলের সাথে সফট স্কিলকেও সমান গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম যেমন ইউটিউব, কোরসেরা, লিংকডইন লার্নিং এর মাধ্যমে অল্প খরচে হাজারো শিক্ষার্থী কোডিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে স্বনির্ভর হচ্ছেন। আবার, অনেক শিক্ষার্থীর বাস্তব রূপ আছে যারা পড়াশোনার পাশাপাশি স্কিল শিখে চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হয়েছেন। 

পড়াশোনার পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্টের গুরুত্ব বাড়ার মূল কারণ হলো সময়ের পরিবর্তন। আজকের বিশ্ব পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর। এআই, মেশিন লার্নিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, প্রোগ্রামিং, ভিডিও এডিটিং এসব এখন সাধারণ দক্ষতা হয়ে উঠেছে। যে এগুলো শিখবে সে এগিয়ে যাবে আর যে শিখবে না সে অজান্তেই পিছিয়ে পড়বে। আর শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, মানুষের সাথে কথা বলা, দলগতভাবে কাজ করা, সমস্যা সমাধান করা,নেতৃত্ব দেওয়া এসব সফট স্কিলও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ আজ কোনো প্রতিষ্ঠান এমন কর্মী চায় না, যে শুধু নিজের কাজটাই জানে। তারা চায় এমন মানুষ, যে দল গড়ে কাজ করতে পারে,যোগাযোগ করতে পারে এবং প্রয়োজন হলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে। তবে সমস্যা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষাব্যবস্থাও অনেক সময় শুধুই পাঠ্যপুস্তকনির্ভর থাকে। বাস্তব শিক্ষায় জোর কম। যার ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো করতে পারলেও বাস্তব সমাজে বা কর্মক্ষেত্রে অনেকেই অস্বস্তিতে পড়ে।এ অবস্থায় সমাধান হলো শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে স্কিল বেইজড কার্যক্রম যোগ করা, শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপে উৎসাহ দেওয়া, অনলাইন প্লাটফর্মের ব্যবহার বাড়ানো আর পরিবারগুলোকে বুঝিয়ে বলা যে দক্ষতা শেখা পড়াশোনার ক্ষতি করে না বরং পড়াশোনাকে আরও দৃঢ় ও কার্যকর করে। 

জীবনকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা আর স্কিল দুটোই অপরিহার্য। শিক্ষা আমাদের ভেতরের আলো আর স্কিল হলো সেই আলোর ব্যবহার করার শক্তি। যে শুধু জ্ঞান নিয়ে বসে থাকে সে জানে কী করতে হবে কিন্তু করতে পারে না। আর যে স্কিলের চর্চা করে সে জানে কী করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে। ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতাময় পৃথিবী তাদেরই হবে, যারা নিজেদের জ্ঞানকে দক্ষতার সাথে মিশিয়ে নতুন পথ তৈরি করতে পারে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর এখন থেকেই চেষ্টা করা উচিত পড়াশোনার পাশাপাশি অন্তত একটি স্কিল তৈরি করা,যা তাকে তার স্বপ্নের সিঁড়িতে একধাপ এগিয়ে দেবে। 


লেখক 

আরমীন আমীন ঐশী

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/148049