ধনী হতে ইসলাম কি নিরুৎসাহিত করে?
মওলবি আশরাফ
অনেক মনে করেন ইসলাম ধন-সম্পদ উপার্জনকে নিরুৎসাহিত করে আর কোনো মুসলমানের ধনী হওয়া যেন খুবই খারাপ কাজ। কিন্তু এ ধারণা একদমই ভুল। ইসলাম মৌলিকভাবে ধন-সম্পদ উপার্জন বা ধনী হওয়াকে খারাপভাবে দেখে না, বরং তার উদ্দেশ্য ও পদ্ধতিতে যদি কোনো মন্দ কিছু থাকে, সেই ক্ষেত্রে আপত্তি করে। অর্থাৎ কেউ যদি দুনিয়ার লোভ, অহংকার প্রদর্শন ও মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে ধনী হয়, অথবা হারাম পদ্ধতিতে অনেক অর্থসম্পদ কামাই করে—ইসলাম এসব ক্ষেত্রে বাধা দেয়। কিন্তু খোদাভীতির সাথে সম্পদশালী হতে কোনো অসুবিধা নাই।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোনো পাপ নেই। (সুরা বাকারা: ১৯৮)
এখানে ‘অনুগ্রহ’ বলতে ধনসম্পদ উপার্জন উদ্দেশ্য। জাহেলি যুগে হজে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করাকে গোনাহ মনে করা হতো। আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করার মাধ্যমে আমাদের জানাচ্ছেন, সম্পদ আল্লাহর অনুগ্রহ, এবাদত-বন্দেগি ঠিক রেখে এই অনুগ্রহ তালাশ করা যেতেই পারে।
তবে ইসলাম এক্ষেত্রে প্রথমেই উদ্দেশ্য ঠিক করতে বলে। একজন মানুষের জন্য তখনই সম্পদশালী হওয়া উত্তম, যখন তার নিয়ত হবে:
১. পরনির্ভর না হয়ে স্বাবলম্বী জীবনযাপন করা
২. পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা
৩. সন্তানদের জন্য সঞ্চয় রেখে যাওয়া
৪. দান-সদকা ও জাকাতের মাধ্যমে মানুষের উপকার করা
৫. ইসলামের প্রচার ও বিজয়ের জন্য ব্যয় করা
১. পরনির্ভর না হয়ে স্বাবলম্বী জীবনযাপন করা
রসুল (সা.) বলেন, তোমাদের যে কেউ ভোরবেলা বের হয়ে কাঠের বোঝা পিঠে বহন করে আনে এবং তা থেকে সে সদকা করে ও মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত থাকে, সে ওই ব্যক্তি থেকে অনেক ভালো, যে লোকজনের কাছে সাহায্য চায়, মানুষ তাকে কিছু দেয় অথবা মানা করে দেয়। কেননা উপরের হাত নীচের হাত হতে উত্তম। (সহিহ মুসলিম: ১০৪২)
২. পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা
রাসুল (সা.) বলেন, যদি কেউ ঘর থেকে বের হয় তার ছোট সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য, তাহলে সে আল্লাহর পথে আছে। যদি সে তার বৃদ্ধ মা-বাবার খেদমতের জন্য বের হয়, তাহলে সেও আল্লাহর পথে আছে। যদি সে নিজের জন্য রোজগার করে, যাতে নিজেকে গোনাহমুক্ত রাখতে পারে, তাহলে সেও আল্লাহর পথে আছে। কিন্তু যদি কেউ মানুষকে দেখানো ও অহংকারের জন্য বের হয়, তাহলে সে শয়তানের পথে রয়েছে। (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব: ১৯৫৯)
৩. সন্তানদের জন্য সঞ্চয় রেখে যাওয়া
সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, বিদায় হজের বছর, আমি একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আল্লাহর রসুল (সা.) আমার খোঁজখবর নিতে আমার কাছে এলেন। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রসুল (সা.), আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন আমার রোগ কতটা গুরুতর। অথচ আমি সম্পদশালী, আর আমার একমাত্র কন্যাসন্তানই আমার উত্তরাধিকারী। আমি কি আমার সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ দান করে দেব।
আল্লাহর রসুল (সা.) বললেন, না।
আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক দিই?
তিনি বললেন, না।
তারপর রাসুল (সা.) বললেন, তিন ভাগের এক ভাগ দিতে পারো। আর তিন ভাগের এক ভাগও অনেক বেশি। সন্তানদের ধনী বানিয়ে রেখে যাওয়া তাদেরকে মানুষের কাছে হাত পাতার মতো অসহায় অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু ব্যয় করো তা যত সামান্যই হোক, তাতে তোমার সওয়াব আছে এমন কি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দাও, তার জন্যও। (সহিহ বুখারি: ৩৯৩৬, মুয়াত্তা মালেক: ১৪৬১)
৪. জাকাত ও নফল সদকার মাধ্যমে মানুষের উপকার করা
রসুলে (সা.) বলেন, শুধু দুই ধরনের মানুষের প্রতি ঈর্ষা করা যায়:
১. ওই ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, এরপর তাকে হক পথে অকাতরে দান করার ক্ষমতা দিয়েছেন।
২. ওই ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হেকমত (প্রজ্ঞা) দান করেছেন, এরপর সে তার দ্বারা ফয়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়। (সহিহ বুখারি: ৭৩)
৫. ইসলামের প্রচার ও বিজয়ের জন্য ব্যয় করা
রসুলে পাক (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যাওয়ার খরচ বহন করে এবং সে নিজের আবাসে থেকে যায়, সে তার প্রতিটি দিরহামের বিনিময়ে সাত শত দিরহামের সওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি সশরীরে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং এর খরচ বহন করে, তার প্রতিটি দিরহামের বিনিময়ে সে সাত লাখ দিরহামের সওয়াব পায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৭৬১)
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/146665