৪৫ বছর ধরে একই মঞ্চ নাটকে অভিনয় করছেন কেরামত মওলা
অভি মঈনুদ্দীন : বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের প্রাণ কেরামত মওলা। শুধু মঞ্চ নাটকেই তিনি তার অভিনয় দিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করেননি। এদেশের টিভি নাটকে, বেতার নাটকে, সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় নিজেকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করে দর্শকের হৃদয়ের অনুভূতিকে নাড়া দিয়েছেন। সেই তিনিই হচ্ছেন কেরামত মওলা।
আজ গুনী এই নন্দিতজন পা রাখছেন ৮৪’তে।১৯৪২ সালের ১৫ নভেম্বর যশোহরের মহম্মদপুরের শিরগাঁ’য় জন্ম তার। পড়াশুনার শুরুটা তার কলকাতায় হলেও পরবর্তীতে ঢাকায় এসে প্রিয়নাথ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে চারুকলা অনুষদে পড়াশুনা করতে গিয়ে তিনি তার গুরু শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদীনের সাহচার্য্যে আসেন। নিজের নির্দেশনায় কেরামত মওলা প্রথম অভিনয় করেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে। ১৯৬০ সালে আনিস চৌধুরী রচিত ও হেশাম উদ্দিন আহমেদ নির্দেশিত শিক্ষা সপ্তাহ উৎসব ’৬০ উপলক্ষ্যে ‘মানচিত্র’ নাটকে অভিনয় করে নাট্যপদক অর্জন করেন। ৬০ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
অভিনয়ের ধারাবাহিকতায় তিনি মঞ্চে একে একে অভিনয় করেন ‘তাসের দেশ’, ‘রাজা ও রানী’,‘ ‘রক্ত করবী’, বিবর্তন’, ‘বিন্দু বিন্দু রং’, ‘ডাকঘর’, ‘ইডিপাস’, ‘প্রচ্ছদপট’, ‘অনেক তারার হাতছানি’, লাললণ্ঠন’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘চারিদিকে যুদ্ধ’, ‘ওথেলো’, ‘সেনাপতি’, ‘মহাপুরুষ’, ‘চোর চোর’সহ বহু নাটকে অভিনয় করেন। থিয়েটার প্রযোজিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকে বৃদ্ধ চরিত্রে তিনি টানা ৪৫ বছর ধরে অভিনয় করে যাচ্ছেন। নাটকটি সৈয়দ শামসুল হকের লেখা। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি কাব্যনাট্য, যা ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তার কয়েকবছর পরেই আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চে দর্শক প্রথম উপভোগ করেন। ১৯৬৭ সালে কেরামত মওলা অ্যাসিসট্যান্ট ডিজাইনার হিসেবে বিটিভিতে যোগ দেন।
ফকরুল আলম পরিচালিত ‘মানুষ অমানুষ’ সিনেমায় তিনি প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ‘অঙ্গীকার’, ‘সূর্য দীর্ঘল বাড়ি’, ‘এখনই সময়’, ‘মহানায়ক’, ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’, ‘রানী খালের সাঁকো’, ‘গরম হাওয়া’,‘ পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘অন্যজীবন’, ‘দুখাই’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘নন্দিত নরকে’ ইত্যাদি সিনেমায় অভিনয় করেন। বরেণ্য এই সপ্তপদী ব্যক্তিত্ব ২০১৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
আজ তার জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘ এটা সত্যি যে জন্মদিনের একটা বাড়তি আনন্দ থাকে। তবে জন্মদিনকে ঘিরে কোন উৎসব আয়োজন করতে পছন্দ করিনা বা আগ্রহী নই। আমার পরিবার দিনটিকে বিশেষায়িত করার চেষ্টায় থাকে। দু:খ একটাই, যাদের কারণে পৃথিবীতে এলাম-সেই বাবা মা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে খুউব ভালোলাগতো। তারা আমাকে মানুষ করার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। মহান আল্লার্হধসঢ়; কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তিনি আমাকে সুন্দর জীবন দিয়েছেন। স্ত্রী, সন্তান সাফকাত, দুই নাতি নাতনী এহান-এলাইনাকে নিয়ে ভালো আছি। আর এখন শুধু পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটকটাতেই অভিনয় করি যদি বছরে দু’একবার মঞ্চস্থ হয়।’
কেরামত মওলা ২০০৭ সাল থেকে ২০২১/২২ সাল পর্যন্ত পর্যন্ত রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যাণ্ড মিডিয়া বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। টিভিতে তার উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে অন্ধকারেই আলো, নদীর আরেক নাম, ফিরে দেখা, মাটির কোলে, গহরগাছি. তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, জোনাকী জ¦লে ইত্যাদি।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/146653