প্রেম গোপনেই স্বস্তি দেয়! 

প্রেম গোপনেই স্বস্তি দেয়! 

লাইফস্টাইল ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্ত তুলে ধরার এই যুগে প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনার বিষয়ে দ্বিধা বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণী ও নারীদের মধ্যে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্রবণতা এতটাই স্পষ্ট যে, ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিন পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছে—“প্রেমিক থাকা কি এখন লজ্জার বিষয়?”

ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে এখন অনেকে সঙ্গীর মুখ না দেখিয়ে শুধু হাত ধরা, কফির কাপ বা ছায়ার মতো ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি দিচ্ছেন—যাকে বলা হচ্ছে ‘সফট লঞ্চ’। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে আছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা, নিজস্ব ব্র্যান্ডিং বজায় রাখা এবং আত্মনির্ভরতার বার্তা দেওয়ার ইচ্ছা।

ইনফ্লুয়েন্সার তাওয়ানা মুসভাবুরি, যার ৩৩ হাজার ফলোয়ার আছে, বলেন—তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রেমিকের চেহারা আড়াল করেন। “আমি চাই মানুষ আমাকে একজন শক্তিশালী, স্বনির্ভর নারী হিসেবে দেখুক—যার সাফল্যে অন্য কারও হাত নেই,” বলেন তিনি।


সম্পর্ক মানেই অর্জন নয়

ভোগ ম্যাগাজিন-এর ভাইরাল নিবন্ধে লেখক শঁতে জোসেফ লেখেন, সম্পর্ক নিয়ে নারীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। অনেকে এখন সঙ্গী থাকার সামাজিক স্বীকৃতি উপভোগ করতে চাইলেও, “বয়ফ্রেন্ড-পাগল” হিসেবে পরিচিত হতে চান না। তার মতে, প্রেমিক থাকা এখন আর কোনো অর্জন নয়; বরং এটি নারীর স্বাধীনতার প্রকাশে বাধা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্র্যান্ড ঝুঁকি

দক্ষিণ লন্ডনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্টেফানি ইয়েবোয়াহ জানান, একবার প্রেমিকের ছবি পোস্ট করার পর তার প্রায় এক হাজার ফলোয়ার কমে যায়। তিনি বলেন, “মানুষ আমাকে আর আগের মতো অনুসরণ করতে চায়নি, কারণ আমার কনটেন্টে ‘ব্যক্তিগত জীবন’ ঢুকে গেছে।”

কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষক ড. জিলিয়ান ব্রুকস বলেন, “ইনফ্লুয়েন্সাররা আসলে একটি নির্দিষ্ট নান্দনিকতা বিক্রি করেন। যখন তারা সেই ব্র্যান্ডের সীমা ছাড়িয়ে যান, তখন শ্রোতারা বিভ্রান্ত হয়।”

সাধারণ নারীদের ভাবনা

যারা ইনফ্লুয়েন্সার নন, তাদেরও সম্পর্ক আড়াল করার নানা কারণ রয়েছে। ২৫ বছর বয়সী মিল্লি বলেন, “আমি বাগদত্তের ছবি দিতে দ্বিধা বোধ করি, কারণ আমি চাই না মানুষ ভাবুক আমি তার ওপর নির্ভরশীল।”

২০ বছর বয়সী শার্লট মনে করেন, “বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক আরও ব্যক্তিগত হওয়া উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেওয়া মানে নিজের সম্পর্কের নিখুঁত রূপ দেখানোর চাপ তৈরি করা।”

কু-নজরের ভয় ও গোপনীয়তা

২১ বছর বয়সী আথেরা জানান, তার বন্ধুরা অনেকেই সম্পর্কের ছবি পোস্ট করেন না কু-নজরের ভয়ে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ঈর্ষা বা বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিকে ‘ইভিল আই’ বলে ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজমনোবিজ্ঞানী ড. গোয়েনডোলিন সাইডম্যান বলেন, “মানুষ এখন বুঝতে পারছে অনলাইনে একবার কিছু পোস্ট করলে তা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। তাই তারা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আরও সতর্ক হচ্ছে।”

সূত্র: বিবিসি

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/146622