উত্তরাঞ্চলের তিনটি ট্রেনে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই 

উত্তরাঞ্চলের তিনটি ট্রেনে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই 

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চল থেকে শিক্ষানগরী রাজশাহীতে যাতায়াতে একমাত্র ট্রেনই ভরসা। এই রুটে চলাচলরত তিনটি ট্রেনে চলাচলে নানা সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। ট্রেনগুলো হলো- তিতুমীর এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস।

দেশের উত্তরাঞ্চলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ১৬টি ও বৃহত্তর রংপুর বিভাগে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিভিন্ন জেলা উপজেলার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সহজ এবং নিরাপদ মাধ্যম ট্রেন। চিলাহাটী টু রাজশাহী এবং পঞ্চগড় টু রাজশাহী এই রুটে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন যাতায়াত করে। কিন্তু এই ট্রেনে চলাচলে পড়তে হয় নানা দুর্ভোগে।

জানা যায়, ট্রেনগুলোর  বেশিরভাগ জানালা খোলা যায় না, রয়েছে আসন স্বল্পতা, ছুটির দিনে অতিরিক্ত ভিড়, ট্রেনের ভেতর খাবার ও অন্যান্য সুবিধার অভাব, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, নোংরা কামরা, এছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার সুবিধাও নেই। এমন অবস্থায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। এদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে, এই তিন ট্রেনের কোচগুলো ১৫ বছর আগে চায়না থেকে কেনা হয়েছিল। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ২শ’ কোচ পাওয়ার কথা। সেগুলো পেলে ট্রেনগুলো রিপ্লেস করে অন্য রুটে দেওয়া হবে।

উত্তরাঞ্চল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির আহ্বায়ক নিয়ামুল করিম শান্ত ও ছাত্র আমানতদৌলা বলেন, রাজশাহী, সান্তাহার, জয়পুরহাট, ফুলবাড়ী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী মারাত্মক সমস্যা। চেয়ার কোচ হওয়ায় ভেতরের করিডোর খুবই সরু। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ট্রেনের আসন ও টয়লেটসহ অন্যান্য জিনিস ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া যাত্রী মধুসূদন গুপ্তা, রিফাত সরকার, পারভীন আরা, সানজানা লাবিবা, কাজল রায়, শানু আক্তার বলেন, কিছু যাত্রী আসন এবং জানালার চারপাশে ময়লা করে রাখেন, যা পরিবেশকে নোংরা করে তোলে। অনেক সময় আসনগুলোর টিকিট দ্রুত বিক্রি হয়ে যায় এবং যাত্রীদের ঠিকঠাকভাবে টিকিট পেতেও সমস্যা হয়, যা আরও একটি বড় সমস্যা।

এছাড়াও কিছু কোচে ছারপোকার আক্রমণ, ঘনঘন হকারদের পদচারণাসহ তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হতে হয় যাত্রীদের। গাড়িতে কর্মরত গার্ডরাও তেমন তদারকি করেন না। অভিযোগ রয়েছে জিআরপি পুলিশ টাকার বিনিময়ে হকার ট্রেনে তোলেন।

সাধারণ যাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, ট্রেনের জানালা সম্পূর্ণ খোলা যায় না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে হুড়োহুড়ি করে দরজা পর্যন্ত যেতে যেতেই মানুষ মারা যাবে। ট্রেনে অধিকাংশ ফ্যান অকার্যকর, টিকেটবিহীন যাত্রীর আধিক্য, অনলাইন/কাউন্টারে টিকেট না থাকলেও অধিকাংশ সময় সিটে টিকেটধারী যাত্রী না থাকা, যাত্রায় অধিক সময় ব্যয় (ক্রসিং ও ইঞ্জিন চেঞ্জ ইত্যাদিতে)। অপরিস্কার ওয়াশরুম ও পানি না থাকার সমস্যা তো রয়েছেই।

বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রীদের তেমন সুবিধা দেয়না। যাত্রীরা এই ট্রেনকে গরুর গাড়ি হিসেবে উপহাস করে! ট্রেনের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও যাত্রীসেবা একেবারে নগন্য।

ফুলবাড়ীর রেলস্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম বলেন, ফুলবাড়ী স্টেশনে দিনে লক্ষাধিক টাকার টিকেট বিক্রি হয়। আসন সংখ্যা বাড়ালে আয় আরও বৃদ্ধি পাবে। চাহিদার তুলনায় স্টেশনে আসন সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। রাজশাহী চলাচলের জন্য তিনটি ট্রেনেই ভরসা। তবে ট্রেনগুলোর কিছু সমস্যা রয়েছে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, ১৫ বছর আগে কেনা এই ট্রেনগুলোর জানালা পুরোপুরি খোলে না। এগুলো ঠিক করতে হলে ওয়ার্কশপে নিতে হবে। অতিরিক্ত চেয়ার কোচ না থাকায় তা পাঠানো যাচ্ছেনা।

অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কিছুদিন কষ্ট করতে হবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে ৬ মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ২শ’ কোচ আসার কথা। এলে রাজশাহী রুটে চলাচলরত ট্রেনগুলো লোকাল করে দেয়া হবে এবং নতুন কোচগুলো রাজশাহী লাইনে সংযুক্ত করা হবে।

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/146558