রাজশাহীতে ছেলে খুনের ঘটনায় মামলা করলেন বিচারক
রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে(১৬) খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন। আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে তিনি মামলার এজাহারে সই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুর গ্রামের বাড়ি রওনা হন। পরে রাজপাড়া থানা-পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আরএমপির মুখপাত্র বলেন, বিচারক নিজে বাদি হয়ে মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি লিমন মিয়াকে(৩৪) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
জানা যায়, আসামি লিমন মিয়া গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া ভবানীগঞ্জ গ্রামের এসএম সোলায়মান শেখের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। লিমন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে তার চাকরি চলে গেলে তিনি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
কয়েক বছর আগে বিয়ে করলেও তার সংসার টেকেনি। বিচারক আব্দুর রহমানের স্ত্রী তাসমিনা নাহার লুসীর (৪৪) সাথে তার পূর্বপরিচয় জেরে তার কাছ থেকে টাকা নিতেন লিমন। পুলিশ জানায়, টাকা দেওয়া বন্ধ করলে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করছিলেন লিমন, দিয়েছিলেন প্রাণনাশের হুমকিও। এ নিয়ে ৬ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তাসমিনা।
বিচারক আব্দুর রহমান এক বছর আগে শ্রম আদালতের বিচারক হয়ে রাজশাহী আসেন। গত মাসে তাকে মহানগর দায়রা জজ হিসেবে পদায়ন করা হয়। রাজশাহী আসার পর নগরীর ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে তাওসিফকে নিয়ে থাকতেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় এই বাসায় যান লিমন। সেখানে তাওসিফকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাসমিনা নাহারও। এছাড়া ধস্তাধস্তিতে হামলাকারী নিজেও আহত হন। পরে তিনজনকেই ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাওসিফকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তাওসিফের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জানান, তাওসিফের ডান ঊরু, ডান পা ও বা বাহুতে ধারালো ও চোখে অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। এই তিন জায়গার রক্তনালি কেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও ছিল শরীরে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে তাওসিফের গলায় কালশিরা দাগ রয়েছে বলে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, নরম কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধের কারণে দাগটি হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা একই সময়ে হয়েছে বলেও জানান তিনি। নিহত তাওসিফ রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/146530