বিদেশমুখী মেধার মিছিলে দেশের ভবিষ্যৎ

বিদেশমুখী মেধার মিছিলে দেশের ভবিষ্যৎ

‘পাচার’ শব্দটা শুনলেই আমাদের মাঝে অনুভূত হয় অবৈধভাবে কোনো জিনিসের স্থানান্তর যেমন: মাদক, টাকা, মানুষ ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এমন এক পাচারের নীরব বিপ্লব ঘটছে, যা দেশ ও জাতির জন্য অশনিসংকেত। তবু আমরা এটাকে বাহবা দিয়ে উৎসাহিত করছি এর পরিধি বিস্তৃত করার জন্য। সেই পাচারকে আমরা আবার গর্বের সাথে ধারণ করি এবং প্রচার করি। যার নাম মেধা পাচার। একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে এই মেধার মাধ্যমে, যা জাতির শিকড়ে আমূল পরিবর্তন আনে।

উন্নত বিশ্ব বলতে আমরা যাদের বুঝি, তারা সবাই নিজ দেশের জনশক্তির মেধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে এই অবস্থানে এসেছে। সেখানে আমাদের দেশের অবস্থান কোথায়? গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বছরে গড়ে প্রায় ৫৩ হাজার। এমনকি জরিপে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে  বাংলাদেশের ৫৮ শতাংশ তরুণ নিজেকে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকে বেশি নিরাপদ ও সুখকর মনে করে। দেশের অর্ধাংশের বেশি তরুণ দেশে থাকতে অনিরাপদ বোধ করছে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এতে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা কেন এখনো তৃতীয় বিশ্বের দেশে অবস্থান করি, কখনো কি চিন্তা করেছি? একটা কথা খুব প্রচলিত “আমেরিকা ভালো দেশ না, তবে ভিসা পেলে ছাড়তে রাজি না।” যে প্রজন্ম দেশভক্তি ভুলে বিদেশমুখী, তাদের ওপর ভরসা করে আমরা দেশের উন্নতি কামনা করব কিভাবে? কে এই দেশকে বিশ্বের বুকে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড় করাবে? এর জন্য কী দেশত্যাগী তরুণরা দায়ী নাকি রাষ্ট্র বা সমাজের ? 

কারণ অনুসন্ধান করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে প্রথমত আমাদের সামাজিক মানসিকতা, বিদেশে পড়তে গেলে তাকে ‘অন্য উচ্চতা’র মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে আরও শিক্ষার্থী উৎসাহিত হয় দেশ ছাড়তে। তার উপর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায়োগিক নয় এবং সেই অনুযায়ী কর্মসংস্থানও সীমিত। কিছু হাতে-গোনা বিষয় যেমন আইন, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া বাকিগুলোর বাস্তব প্রয়োগ খুব কম। যেমন: পালি, উর্দু বা সংস্কৃত সহ আরো কিছু বিষয়ে পড়াশোনা করে এই আধুনিক যুগে দেশের জন্য কী অবদান রাখা সম্ভব এ বিষয়ে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা নেই। একই সাথে ঘুষ যেন সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছে। একটি সাধারণ চাকরি পেতেও লাখ টাকা ঘুষ লাগতে পারে, যা সাধারণ জনগণের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। তাই তারা বিদেশমুখী হয়। 

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের উচিত প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসার করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, তরুণদের উদ্যোক্তা হতে সহায়তা, বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা প্রদান, দুর্নীতি ও ঘুষমুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সমাজ ও রাষ্ট্র যদি আন্তরিকভাবে পদক্ষেপ নেয়, তবে দেশের উন্নতির এই অশনি সংকট থেকে আমরা অবশ্যই পরিত্রাণ পেতে পারি। আমরা যে স্বপ্ন ‘৭১-এ দেখেছিলাম এবং ’২৪-এ রক্ত দিয়ে তা বাঁচাতে চেয়েছি, সেই রক্ত তখনই সফলতার মুখ দেখবে।

লেখক 

মুশফিকুর রহমান

শিক্ষার্থী

আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/146236