ফরিদপুর-১ আসনে আলোচনায় ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিনের পুত্র ড. সৈয়দ জাভেদ সালেহউদ্দিন
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ইতোমধ্যে কিছু আসন সংরক্ষিত রেখে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করছে। সেই তালিকায় ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) আসনটি এখন বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। কারণ এই আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন ফরিদপুরের কিংবদন্তি রাজনীতিক ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের পুত্র, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির বর্তমান সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ড. সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন।
ফরিদপুরের রাজনীতিতে সালেহউদ্দিন পরিবারের নাম বহু দশক ধরে শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে আসছে। ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুস সালাম খানকে পরাজিত করে এমএনএ নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী গণপরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি বাংলাদেশের মূল সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। তবে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী ভূমিকার সমালোচনার কারণে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ফরিদপুর-৩ (বর্তমান ফরিদপুর-১) আসনে আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মন্ত্রী গৌরচন্দ্র বালাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। পরে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-এ যোগ দিয়ে প্রথম সংসদে বিরোধী দলের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
পরবর্তীকালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি গঠনের সময় ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেন। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১২ দলীয় ঐক্যজোটের শরিক হিসেবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৮৩ সালে তার মৃত্যু হলেও দলটি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল। জাস্টিস পার্টি বর্তমানে ১২ দলীয় জোটভুক্ত দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে।
১২ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, ফরিদপুর-১ আসনে জাস্টিস পার্টির পক্ষ থেকে ড. সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মদ সালেহউদ্দিনের নাম একক প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের দল বিএনপির দীর্ঘ আন্দোলনে কৌশলগতভাবে অংশ নিয়েছে। ড. জাভেদ সালেহউদ্দিন শুধু একজন রাজনীতিক নন, তিনি উচ্চশিক্ষিত, নীতিবান ও আদর্শবান ব্যক্তি, যিনি তার পিতার রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করছেন।”
ড. জাভেদ সালেহউদ্দিন পেশায় আইনজীবী। তিনি চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিআরসিসি (China Railway Construction Corporation)-এর সাবেক আইন উপদেষ্টা এবং বেঙ্গল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা। তার পিতা ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিনের নামে প্রতিষ্ঠিত “ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন টেকনিকাল কলেজ”-এরও তিনি প্রতিষ্ঠাতা। ২০০১ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়া, ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন সরকারের সময় গঠিত ন্যাশনাল ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের একজন ছিলেন তিনি এবং একাধিকবার পুলিশি হামলার শিকার হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভক্তির কারণে সৎ, নিরপেক্ষ এবং প্রভাবশালী প্রার্থী হিসেবে ড. জাভেদ সালেহউদ্দিনের নাম এগিয়ে এসেছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা একজন গ্রহণযোগ্য ও শিক্ষিত প্রার্থী খুঁজছিলেন, যিনি ঐক্যবদ্ধভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন। তাদের মতে, সালেহউদ্দিন পরিবার সেই যোগ্যতা ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
দলের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফরিদপুর-১ আসনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি গুলশান কার্যালয় থেকেও ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ১২ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির এই প্রার্থীকেই মনোনয়নের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় রাজনীতিতে এখন আলোচনা চলছে— ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিনের উত্তরসূরি ড. জাভেদ সালেহউদ্দিন যদি বিএনপি বা জাস্টিস পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান, তাহলে ফরিদপুর-১ আসনের ভোটের সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে। কারণ, এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাবান্ধব মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরিদপুর-১ আসনটি যদি জাস্টিস পার্টির ড. জাভেদ সালেহউদ্দিন পান, তবে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয় অর্জন করতে পারেন। এতে ফরিদপুর জেলা আবারও জাতীয়তাবাদী শক্তির ঘাঁটি হিসেবে পুনর্গঠিত হবে বলে তারা আশা করছেন।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/146162