আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনন্য নাম
এক আলোকরশ্মির জন্মকথা। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে ৩৮ বছরে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী। ১৯৮৮ সালের ১১ নভেম্বর, বাংলার আকাশে যে আলোক রেখাটি প্রথম উদ্ভাসিত হয়েছিল, তা কেবল একটি শিল্পীগোষ্ঠী’র জন্ম নয় বরং এক আত্মিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা। বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ধারণ এবং সুষ্ঠু বিকাশই আমাদের ব্রত এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৮৮ খ্রিঃ একদল স্বপ্নবান তরুন-তরুনীর উদ্যোগে আব্দুস সামাদ পলাশ-এর প্রস্তাবে সকলের সমর্থনে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী নামকরণ হয়েছিল এবং পরবর্তীতে মনোগ্রাম রূপকার করেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম।
১৯৮৮ খ্রিঃ ১১ নভেম্বর বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরীর মঞ্চে আব্দুস সামাদ পলাশ-এর দর্শনীর বিনিময়ে একক নৃত্য সন্ধ্যার মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নৃত্য-অভিনয়-সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়, যা অক্লান্ত পরিশ্রমে শত বাধা বিপত্তিকে তুচ্ছ মনে করে বিভিন্ন ঘাত অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে আমাদের ব্যাপ্তী ছড়িয়েছে। দিক নির্দেশক হিসেবে গড়ে ওঠার অঙ্গীকার নিয়ে বল দর্পিত পায়ে এগিয়ে চলেছে। আমরা অতিক্রম করেছি ৩৭ বছর, এই ৩৭ বছরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। আমরা নিয়মিত ভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন এবং বগুড়া’র সু-সাহিত্যিক রোমেনা আফাজ ও আমরা ক’জন শিল্পী গোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নৃত্য গুরু আব্দুস সামাদ পলাশ-এর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন সহ স্মৃতি পদক প্রদান করে আসছি। এছাড়া শহীদ প্রফেসর মোহসীন আলী দেওয়ান, মরহুম সৈয়দ তাইফুল ইসলাম তোফা স্মৃতি পাদক প্রদান করেছি। আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস-শিশু নাট্যদিবস পালন সহ জাতীয় ভাবে নৃত্য এবং নাট্য উৎসবে-এর আয়োজন করে থাকি। আমরা ইতিমধ্যে চীন- জাপান-দুবাই-ভারত (দিল্লি, মুম্বাই, কোলকাতা), শ্রীলংকা- হংকং- দক্ষিণ কোরিয়া- মঙ্গোলিয়া-ইন্দোনেশিয়া-কাতার দেশের বাহিরে একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। গোষ্ঠী’র পক্ষ থেকে শীতার্ত-দুস্থ ও বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ- মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা- বৃক্ষরোপণ-মাদককে না বলুন- স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালন করি। আমরা প্রতিটি বিষয়ে ঢাকা ও দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষক এনে নিজেদের উদ্যোগে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী ২০১৭ থেকে নৃত্যকলায় ৪ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শুরু করেছে। আমরা,ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী ইতিপূর্বে সফলতার সহিত একাধিকবার মঞ্চায়ন করেছে ১২টি নৃত্যনাট্য যেমন-নাগ পূর্ণীমা-লাইলী মজনু-নানা বর্ণে বাংলাদেশ-নৃত্যালেক্ষ- ৭১’র কথা-পঞ্চকন্যা-চণ্ডালিকা- ইছামতির বাঁকে- মহুয়া- বারামখানা-চিত্রাঙ্গদা-আমি জন্মেছি বাংলায় ও আমার বাংলা, উল্লেখযোগ্য। এসব নৃত্যনাট্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)- চ্যানেল আই - এটিএন বাংলায় একাধিকবার প্রচার হয় এবং ১৪টি নাটক যেমন- শাজাহান- আমাদের সন্তানেরা- তোমরাই- ক্রস রোডে ক্রস ফায়ার- বিবিসাব- এ পিরিতি সে পিরিতি নয় - পরিত্রাণ - কালো দৈত্য - এক বছরের রাজা - বাঞ্ছা পূরণ বটিকা - পৌণপুনিক- মানবিক ও করোনা নাটক একাধিক মঞ্চায়ন হয়। এছাড়া টিভি নাটক “চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়” এটিএন বাংলায় প্রচার হয়। “আসুন বাংলা শিখি শুদ্ধভাবে, বাংলা বলি আত্মবিশ্বাসে” এই শ্লোগান নিয়ে নৃত্য এবং নাটকের পাশাপাশি শুদ্ধ উচ্চারণ সুললিত ও সাবলিল বাচনভঙ্গি, শ্রুতিমধুর প্রকাশের মাধ্যমে কবিতা আবৃত্তি শেখানো হয়। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী সমাজের অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠী’র কথা চিন্তা করে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষে “ঋদ্ধ সৃজন” নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে, এটি করেছে আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে, গরীব অসহায় ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হোক এবং একজন ভালো শিল্পী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাক এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
আমরা ক’জন শিল্পী গোষ্ঠী’র ছাত্র-ছাত্রীদের শিখিয়েছে মাদককে না বলুন, বাল্য বিবাহ বন্ধ করি, ইভটিজিং থেকে দূরে থাকি, ভালো মানুষ হিসেবে এদেশের উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করি। আজকে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র যে সাফল্য এই সাফল্য একার নয়, এই সাফল্য আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র অভিভাবক, কলাকুশলী সহ প্রিয় বগুড়া বাসী’র তাই আজকের এই দিনে অঙ্গীকার হোক, এই সকল সাফল্য থেকে যেন পিছিয়ে না পরি। এই সাফল্যকে সঙ্গে নিয়ে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, এভাবেই আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে চাই আগামীতে, একটাই সংগঠন-এর প্রত্যাশা। সংগঠন ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্তৃক সম্মাননা গ্রহণ করেছে। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র সাফল্যের সিঁড়িতে অনেকেই হাটছে তাঁরা দেশ-বিদেশে সুনামের সহিত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা,বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এবং পিপলস্ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন অন্তর্ভুক্ত। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, প্রিয় বগুড়াবাসীকে, জেলা প্রশাসন- পুলিশ প্রশাসন- পৌর প্রশাসন- রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ- সাংবাদিক ভাই-বোন এবং সকল পেশাজীবী সংগঠনে’র নেতৃবৃন্দ সহ দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত ভক্তদের কাছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৩৭ বছরের যাত্রা পথে সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আগামী পথ চলায় পূর্বের ন্যায় দোয়া ও আশীর্বাদ এবং সার্বিক সহযোগিতা করবেন আশা করছি, যা আমাদের চলার পথকে আরো সুগম করবে। আজকের এই দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নৃত্যগুরু মরহুম আব্দুস সামাদ পলাশ সহ প্রতিষ্ঠানে’র যে সকল সদস্য না ফেরার দেশে চলে গেছেন তাদের বিধেই আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করছি। মানবতা-ভালোবাসায় এগিয়ে যাক আমাদের দেশ আমাদের সংস্কৃতি।
লেখক
আব্দুল মোবিন জিন্নাহ্
সভাপতি, নাটক ও কবিতা আবৃত্তি কর্মী,
আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী