বগুড়ায় স্ত্রী ও প্রেমিক মিলে স্বামীকে হত্যা, নেপথ্যে পরকীয়া, দুজনই গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় জহুরুল হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ঘাতক স্বয়ং তার স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিক। পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে স্ত্রী ও প্রেমিক মিলে তাকে হত্যা করে ধান ক্ষেতে ফেলে রাখে। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের তাদের কাছ থেকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। এর আগে আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে জহুরুলের ঘাতক স্ত্রী শামিমা বেগম (২৮) ও তার পরকীয়া প্রেমিক বিপুল হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাজরাদীঘি গ্রামের একটি ধানক্ষেতে জহুরুল ইসলামের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে সংবাদ দেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল।
লাশ উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী শামিমা পুলিশকে জানায়, সোমবার রাত ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কে বা কারা তার স্বামী জহুরুলকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাতে তিনি আর বাসায় ফিরে আসেননি। কিন্তু পুলিশ তথ্য প্রযুক্তিগত তদন্ত করে নিহতের স্ত্রী শামিমা ও তার মামাতো ভাই পার্শ্ববর্তী অন্তাহার গ্রামে হামিদুর রহমানের ছেলে বিপুল হোসেনকে সন্দেহ করে।
পরে আজ বুধবার ভোরে নিহত জহুরুলের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী শামিমা ও বিপুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। খালাতো ভাই জহুরুল খুন হওয়ায় পরিবারকে সমবেদনা জানতে বিপুল মঙ্গলবার রাত ওই বাড়িতে আসেন। থানায় দুইজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নিহতের স্ত্রী শামিমা পুলিশকে জানায়, তারা স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মামাতো-ফুপাত ভাই-বোন। আর জহুরুল এবং বিপুল একে অপরের খালাতো ভাই। জহুরুল ইসলামের বাড়ি কাহালু উপজেলায় হলেও বাবা-মা’র বিচ্ছেদের পর ছোটবেলা থেকেই জহুরুল মামার বাড়ি সদরের হাজরাদীঘি গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি পেশায় বেকারি পণ্য সামগ্রী পরিবহনের ভ্যানচালক।
আর বিপুল সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। জহুরুলের সাথে তার বিয়ে হয় ১৫ বছর আগে। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জহুরুলের সাথে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই বিপুলের সাথে শামিমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও তারা প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিপুল মাঝেমধ্যেই শামিমার বাড়িতে আসতেন। শামিমার বাবা বিপুল ও জহুরুলের মামা হওয়ার কারণে গ্রামের লোকজন বিষয়টি সন্দহের চোখে দেখতেন না।
কিন্তু কারণে-অকারণে বিপুলের যাতায়াত পছন্দ করতেন না জহুরুল। এনিয়ে স্ত্রীর সাথে তার দাম্পত্যকলহ লেগেই থাকতো। শামিমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিপুল তাকে একটি ছোট মোবাইল ফোন কিনে দেয়। সেই ফোনটি শামিমা লুকিয়ে রাখত। এভাবে দীর্ঘদিন পরকীয়া সম্পর্ক চলার এক পর্যায় স্বামীকে সরিয়ে দেয়ওার জন্য বিপুলের সাথে পরামর্শ করে শামিমা। দুই জনের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার রাতে শামিমা দুধের সাথে মিশিয়ে তার স্বামীকে ১৫টি ঘুমের বড়ি সেবন করায়। কিছুক্ষণ পর জহুরুল অচেতন হয়ে পড়লে রাত ১১টার দিকে বিপুল শামিমার বাড়ি আসে।
এরপর বিপুল কাঁধে করে জহুরুলকে বাড়ি থেকে বের করে গ্রামের একটি মাঠে পরিত্যক্ত বাড়ির কাছে নিয়ে যায়। এসময় সাথে শামিমাও সেখানে যায়। এরপর জহুরুলের মাথা পরিত্যাক্ত বাড়ির দেয়ালের সাথে কয়েকবার আঘাত করে। এক পর্যায় একটি পুরাতন স্যানিটারি প্যানের পরিত্যাক্ত ভাঙা অংশ দিয়ে জহুরুলের মাথায় একাধিকবার আঘাত করে পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে দুইজনই চলে যায়।
পরে পুলিশ ওই ধান ক্ষেত থেকে জহুরুলের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজার রহমান জানান, গ্রেফতার দুইজনকে আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতে এই হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য তাদের হাজির করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পোস্ট লিংক : https://karatoa.com.bd/article/145524